নরেন্দ্র মোদীরজীবনপথে যাত্রা শুরু উত্তর গুজরাটের মেহসানা জেলার এক পুঁচকে ও মামুলি শহরবড়নগরের গলির গলি তস্য গলিতে। জন্ম ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৫০, দেশ স্বাধীন হওয়ার তিনবছর পর ও ভারত এক সাধারণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে। দামোদর দাসমোদী ও হিরাবা মোদীর ছয় সন্তানের মধ্যে নরেন্দ্র তৃতীয়। ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই আছে বড়নগরের। পুরতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ি থেকে আঁচ পাওয়া যায় যে এটা ছিল শিক্ষাদীক্ষাও আধ্যাত্মচর্চার এক প্রাণবন্ত কেন্দ্র। বড়নগর ঘুরে গেছেন চীনা পর্যটক জুয়েন জাংহিউয়েন সাং। বড়নগরের সঙ্গে জুড়ে আছে এক সমৃদ্ধ বৌদ্ধ ইতিহাস। কয়েক শতক আগে এইশহরে দিনগুজরান করতেন হাজার দশেক বৌদ্ধ সন্নাসী।
ভাদনগর স্টেশন, যেখানে নরেন্দ্র মোদীর বাবার চায়ের দোকান ছিল এবং যেখানে নরেন্দ্র মোদী চা বেচতেন
ছেলেবেলায় নরেন্দ্ররমানুষ হওয়াটা আদৌ কোন রূপকথার বিলাসবহুল জীবন নয়। এক অতি সাধারণ পরিবার। সংসার চলতোটেনেটুনে। ছোট্ট এক একতলা বাড়িতে ফুট চল্লিশের লম্বা ও চওড়ায় বরো ফুট। মাথাছুঁয়ে থাকতো গোটা পরিবার। স্হানীয় রেল স্টেশনে এক চায়ের দোকান দিয়েছিলেন তার বাবা। তিনি সেখানে চা বেচতেন। সেই স্টলে চা বিক্রির কাজে বাবার সঙ্গে হাত লাগাতো ছোট্টনরেন্দ্রও।
ছোটবেলার এসব দিন একজোরাল ছাপ রেখে গেছে নরেন্দ্রর মনে। নাবালক নরেন্দ্র তার লেখাপড়া, পড়াশুনারবাইরের জীবন এবং পরিবারে চায়ের দোকানে কাজকর্মের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতো।নরেন্দ্রর স্কুল সাথীরা তাকে এক মনোযোগী ছাত্র হিসেবে মনে রেখেছে। তার বেশ ঝোঁকছিল বিতর্ক ও বইপত্র পড়ায়। স্কুলের লাইব্রেরিতে তিনি বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকতেন ঘন্টারপর ঘন্টা। খেলাধুলোর মধ্যে সাঁতার ছিল তার খুব প্রিয়। নরেন্দ্র মোদীর বিশালবন্ধুমহলে ছিল সব সম্প্রদায়ের ছেলে। পাড়ায় তার বহু মুসলিম বন্ধু থাকায় ছেলেবেলাতেনরেন্দ্র প্রায়শ হিন্দু ও মুসলিম দু-সম্প্রদায়ের উৎসব উদযাপনে উঠতেন মেতে।
শৈশবে নরেন্দ্র মোদী স্বপ্ন দেখতেন সেনাবাহিনীতে যোগদান করার কিন্তু নিয়তির অন্য পরিকল্পনা ছিল…
তাসত্ত্বেও,শ্রেণিকক্ষে শুরু ও অফিস-কাছারির আবহে সমাপ্ত এহেন ধরাবাঁধা গতের জীবনের অনেকঊর্দ্ধে ছিল তার চিন্তাভাবনা ও কল্পনার জগৎ। তিনি চাইতেন সেখানে বেরিয়ে পড়তে এবংসমাজে এক হেরফের ঘটাতে..... মানুষের চোখের জল ও দুঃখ-দুর্দশা মুছে দিতে। উঠতি বয়সেতার ঝোঁক চেপেছিল বৈরাগ্য সাধন ও আত্মসুখ বিসর্জনে। তিনি ছেড়ে দেন নুন, লঙ্কা,তেল ও গুড়-চিনি খাওয়া। স্বামী বিবেকানন্দর লেখাজোখা আগাগোড়া তন্নতন্ন করে পড়েনরেন্দ্র মোদীর মন যায় অধ্যাত্মবাদের পথে এবং স্বামী বিবেকানন্দর জগৎগুরু একভারতের স্বপ্নকে সাকার করতে তার নিজের ব্রতের জন্য তা এক ভিত্তির পতন করে।
এহেন কোন শব্দ যদিথাকে যা নরেন্দ্র মোদীর শৈশবের বৈশিষ্ট্য এঁকেছে ও যা তার বাদবাকি জীবনের সাথী হয়েআছে, তা হল সেবা। তাপি নদীর সর্বনাশা বন্যার সময়
৯ বছর বয়সি নরেন্দ্র ও তার বন্ধুবান্ধব একখাবারের স্টল খোলে ও তার আয় দান করে ত্রাণকাজে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ তুঙ্গেওঠার ফলে তিনি রেল স্টেশন গিয়ে সীমান্তে আসা-যাওয়া করা জওয়ানদের হাতে তুলে দিতেনচায়ের পেয়ালা। ছোট এক পদক্ষেপ বটে তবে এটা দেখিয়ে দেয় যে অতি কম বয়সেও ভারতমাতারডাকে সাড়া দিতে তার দৃঢ় পণের কথা।
ছেলেবেলায় নরেন্দ্রএক স্বপ্ন ছিল- ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কাজ করা। তার সময়কার বহু কমবয়সির কাছেসেনাবাহিনী ছিল ভারত মাতাকে সেবা করার পরম উপায়। দৈবচক্রে তার বাড়ির লোকজনের এতেসায় ছিল না এতটুকু। নরেন্দ্রর খুব ইচ্ছা কাছেই দাসনগর সৈনিক স্কুলে পড়াশুনা করার, কিন্তু যখন ফি জমা দেওয়ার দিন আসে, বাড়িতে টাকা ছিল না। নরেন্দ্র তো অবশ্যই হতাশহলেন। ভাগ্যবিধাতার কিছু অন্য পরিকল্পনা ছিল এই বালকের জন্য, যে কিনা জওয়ানের উর্দি দেহে চড়াতে না পারায় আশাভঙ্গের বেদনায় ভুগছিল। বছর কয়েক পর, তিনি একঅসাধারণ পথে পা বাড়ালেন যা মানুষকে সেবা করার বৃহত্তর ব্রতের অন্বেষণে তাকে নিয়েগেল ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত।.
তাঁর মায়ের আশীর্বাদ চাইছেন