আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভারতের রয়েছে শিল্পোদ্যোগ স্থাপনের বিশেষ উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস। তাই, এই বিষয়টিকে আমাদের আরওবেশি করে উৎসাহ ও সমর্থন যোগানো প্রয়োজন যাতে ভারত কর্মপ্রার্থী নয়, কর্মদাতারএকটি দেশ হয়ে উঠতে পারে।
- নরেন্দ্র মোদী
কেন্দ্রের এনডিএ সরকার শিল্পোদ্যোগ স্থাপন বিষয়টির ওপর বিশেষ জোরদিয়েছে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিটি রূপায়িত হচ্ছে এই বিশেষ লক্ষ্যপূরণে। চারটিমূল স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বিশেষ কর্মসূচিটি। শুধুমাত্র উৎপাদন ক্ষেত্রেইনয়, অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রেও উৎসাহ যোগানো হচ্ছে এই কর্মসূচির আওতায়।
নতুন প্রক্রিয়া : শিল্পোদ্যোগ স্থাপনকে উৎসাহদানের লক্ষ্যে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচিতে বাণিজ্যিককাজকর্ম সহজতর করে তোলার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নতুন পরিকাঠামো : শিল্পের বিকাশে আধুনিক ও ব্যবহারের পক্ষে উপযোগী পরিকাঠামোর প্রসার একান্ত জরুরি।অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাদানের লক্ষ্যে শিল্পকরিডর এবং স্মার্ট নগরী গড়ে তুলতে আগ্রহী কেন্দ্রীয় সরকার। এজন্য উচ্চ গতির আধুনিকযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বলিষ্ঠ এক সার্বিক পন্থাপদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মানসিকতার পরিবর্তন : সরকারকেসচরাচর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় দেখতে অভ্যস্ত শিল্পক্ষেত্র। কিন্তু ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কর্মসূচিটির মাধ্যমে এই ধ্যানধারণাটিকে অন্যদিকে মোড় দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, সরকারেরভূমিকা এক্ষেত্রে হবে সুযোগ-সুবিধা প্রদানকারী এক বিশেষ শক্তির, নিয়ন্ত্রকের নয়।শিল্পের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক তাই এখন আরও বেশি নিবিড় ও সহযোগিতামূলক।
শিল্পোদ্যোগ স্থাপনের বিষয়টিকে উৎসাহ দিতে সরকার তিনটি বিশেষ কৌশলঅবলম্বন করেছে। এই তিনটি বিষয় হল – নিয়মনীতির অনুসরণ ও বাধ্যবাধকতা, মূলধন সহায়তাএবং বরাত বা চুক্তি সম্পাদন।
নিয়ম-নীতির অনুসরণ ও বাধ্যবাধকতা
বাণিজ্যিক কাজকর্ম সহজতর করে তোলার লক্ষ্যে দেশ এগিয়ে গেছে দ্রুতগতিতে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের র্যাঙ্কিং-এ ভারত এখন উন্নীত ১৩০তম স্থানে। একটিবাণিজ্যিক প্রচেষ্টা স্থাপন এখন এ দেশে আগের থেকে অনেক বেশি সহজ হয়ে উঠেছে।অপ্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ ও বাধ্যবাধকতাকে দূর করে অনেক বিষয়েই অনুমতি ও মঞ্জুরি দেওয়াহচ্ছে অনলাইন ব্যবস্থাতে।
শিল্প লাইসেন্সের জন্য আবেদন কিংবা শিল্পোদ্যোগ স্থাপন সম্পর্কিতস্মারকলিপির ক্ষেত্রে এখন সরাসরি অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সপ্তাহের প্রতিটিদিনই ২৪ ঘন্টা এই সুযোগ পাওয়া যাবে। ২০টির মতো পরিষেবাকে সংহত করে ‘এক জানালা’পোর্টালের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সরকারি সংস্থা বাএজেন্সিগুলির কাছ থেকে ছাড়পত্র লাভের সুযোগ অনেক সহজ হয়ে গেছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক গোষ্ঠী এবং কেপিএমজি-র সহায়তায় বিভিন্ন রাজ্য বাণিজ্যিকসংস্কার রূপায়ণের যে সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তার একটি প্রামাণ্য নথিও তৈরি করেছেকেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে, রাজ্যগুলি পরস্পরের কাছ থেকে শিল্পোদ্যোগ সম্পর্কিতবিভিন্ন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে। শুধু তাই নয়, শিল্পোদ্যোগগুলিরসাফল্যও তারা বিনিময় করতে পারবে পরস্পরের মধ্যে। এর সুবাদে দেশে বাণিজ্যিকপরিবেশেরও দ্রুত উন্নতি ঘটবে বলে সরকার মনে করে।
ভারতে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা প্রসারে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগসম্পর্কিত নিয়মনীতিও এখন অনেক উদার করে তোলা হয়েছে।
মূলধন
কর্পোরেট বহির্ভূত ৫ কোটি ৮০ লক্ষ শিল্প সংস্থায় বর্তমানেকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ১২ কোটি ৮০ লক্ষের মতো। এর ৬০ শতাংশইগ্রামাঞ্চলে কাজের সুযোগ এনে দিয়েছে। ৪০ শতাংশেরও বেশি কাজের সুযোগ পেয়েছেনঅনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ। অন্যদিকে, তপশিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের ১৫ শতাংশমানুষের কাছে পৌঁছে গেছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। কিন্তু লগ্নির ক্ষেত্রেব্যাঙ্কের ঋণ সহায়তার পরিমাণ এখনও আশানুরূপ হারে পৌঁছয়নি। শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রেঅনেকের কাছেই ব্যাঙ্ক ঋণের সুযোগ থেকে গেছে অধরা। অন্যদিক দিয়ে বলতে গেলে, যেক্ষেত্রটি মূলত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি নির্ভর, সেখানে ব্যাঙ্ক ঋণের সুযোগ রয়েগেছে খুবই অপ্রতুল। তাই, এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে ‘প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা’এবং ‘মুদ্রা ব্যাঙ্ক’-এর সূচনা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যে সমস্ত ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগীদের এতদিন পর্যন্ত চড়া হারে সুদ গুনতেহত, তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে অপেক্ষাকৃত অনেক কম সুদে ব্যাঙ্ক ঋণের সুযোগ। ঐদুটি কর্মসূচির সূচনাকাল থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ১৮ লক্ষ ঋণ সহায়তা মঞ্জুর করাহয়েছে যার মাধ্যমে প্রদত্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যে সমস্তশিল্পোদ্যোগী ৫০ হাজার টাকার কম ঋণ গ্রহণ করেছেন, তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে২০১৫-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৫৫ শতাংশ। এর পূর্ববর্তী বছরের সমতুলসময়কালের নিরিখে এই হার পরিমাপ করা হয়েছে।
চুক্তি বা বরাত
চুক্তি বা বরাতদানের বিষয়টিকে আরও সরল ও সহজবোধ্য করে তুলতে আরবিট্রেশনআইনটির সংশোধন ও পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন দেউলিয়া বিধি সম্পর্কেও এক উদ্যোগ গ্রহণকরেছে কেন্দ্রীয় সরকার যা বাণিজ্যিক কাজকর্মকে আরও সহজ করে তুলতে বিশেষভাবেসাহায্য করবে।