“...  

ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি আর এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়েরপরিপ্রেক্ষিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী সমস্ত নৈতিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবংপদত্যাগের প্রস্তাব দিয়েছেন| রাষ্ট্রপতি তাঁর পদত্যাগ গ্রহণ করেছেন এবং...”   – এই আকাঙ্খিত বিষয়টি হওয়ার কথা ছিল ২৫ জুন ১৯৭৫ এর সংবাদে,কিন্তু হায় সেরকম কিছুই হলো না| এর পরিবর্তে শ্রীমতি গান্ধী নিজের ব্যক্তিগতখেয়ালখুশির মত আইনকে উল্টে ফেলে বাঁকিয়ে নেওয়ার সিন্ধান্ত নিলেন| জরুরি অবস্থাজারি হলো এবং দুর্ভাগ্যবশত ভারতকে তার একুশ মাসের ‘অন্ধকারময় সময়ে’ ঠেলে ফেলা হল|আমার সমসাময়িক বেশিরভাগ মানুষেরই জরুরি অবস্থা নিয়ে সামন্য ঝাপসা ধারণা রয়েছে|আমাদের বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমের শিষ্ঠাচার যে, জরুরি অবস্থার বার্ষিকীতে সেইদিনগুলিতে কংগ্রেস কীভাবে ক্ষমতার ক্ষুধায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তা মানুষকেজানানোর পরিবর্তে চলচ্চিত্র অভিনেতাদের সাক্ষাত্কার নেওয়াই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেমনে করেছে|   

এটাও উল্লেখ করতে হবেযে, যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা শ্রীমতি গান্ধীর স্বৈরাচারী শাসনের পরিবর্তে গণতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার জন্য তাদের গোটা জীবন উত্সর্গ করেছেন তারা ইতিহাসের পাতায় হারিয়েগেছেন| আসলে স্বাধীনতা আন্দোলনের পর এটাই ছিল সবচেয়ে বড় সংগ্রাম যেখানে রাজনৈতিক ওঅরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতালোভী কংগ্রেসের শাসনকে পরাজিত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে| আজকেনানাজি দেশমুখ, জয়প্রকাশ নারায়ণ, নাথালাল জাগডা, বসন্ত গজেন্দ্রগড়কর, প্রভুদাসপাটওয়ারির মত মানুষরা (এই তালিকা অনেক দীর্ঘ) যারা মানুষকে পরিচালিত করেছিলেন,তারা কালের স্রোতে মানুষের স্মৃতি থেকে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছেন| তাঁরা হচ্ছেন জরুরিঅবস্থার সময়ের অকীর্তিত বীর| ধর্মনিরপেক্ষ প্রচার মাধ্যমকে আবার “ধন্যবাদ”| 

  

গুজরাটও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল এবং এমনকি যারাজরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে ছিলেন তাঁদের কাছে পথিকৃত হয়ে উঠেছিল| গুজরাটের নবনির্মাণআন্দোলনই কংগ্রেসকে উপলব্ধি করিয়েছিল যে, অন্তত গুজরাতে তাদের ক্ষমতা লিপ্সাবেশিদিন টিঁকে থাকবে না|  কীভাবে মোরবিকলেজের কিছু ছাত্র হোস্টেলে খাবারের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিল এবং কীভাবেতা নবনির্মাণ রূপে রাজ্যব্যাপী জন-আন্দোলনের রূপ নেয়, তা জানার যোগ্য| বাস্তবেগুজরাট সবার জন্য অনুপ্রেরণার কেন্দ্র হয়ে উঠে, এমকি জয় প্রকাশ নারায়ণের জন্যও,যিনি বিহারে একইরকম আন্দোলন শুরু করেছিলেন| সেই দিনগুলিতে ‘গুজরাটের অনুকরণ’বিহারে এক জনপ্রিয় কথা হয়ে উঠেছিল| গুজরাটে অকংগ্রেসি শক্তির বিধানসভা ভেঙ্গেদেওয়ার দাবি বিহারের অকংগ্রেসি শক্তিকেও অনুপ্রেরণা দান করে| এটা এই কারণে যেইন্দিরা গান্ধীই একবার বলেছিলেন, গুজরাট বিধানসভা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য তাঁকে মূল্যদিতে হয়েছে| চিমনভাই প্যাটেলের কংগ্রেস সরকারের পতনের পর গুজরাতে নির্বাচন হয়(কংগ্রেস কখনোই নির্বাচন করতে চায়নি| এটা মোরারজি দেশাইয়েরই প্রচেষ্টা ছিল যারজন্য কংগ্রেসকে তা করতে হয়েছে এবং রাজ্যে নির্বাচন হয়েছে)|   

বাবুভাই জে. প্যাটেলকে মুখ্যমন্ত্রী করে গুজরাতে প্রথমবারেরমত অ-কংগ্রেসি সরকার শপথ গ্রহণ করে| গুজরাটের সরকার জনতা মোর্চা সরকার হিসেবেপরিচিত হয়| এখানে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সেই দিনগুলোতে ইন্দিরা গান্ধীগুজরাটের মানুষের প্রতি প্রতারণার সমস্ত কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করেন| এমনকিবিভিন্ন সময়ে তিনি ‘ম্যায় গুজরাট কি বহু হু’ এই বহুচর্চিত কথা বলেও ভোট চেয়েছেন(আমি গুজরাটের পুত্রবধু তাই সবাই আমাকে সমর্থন জানানো উচিত)| গুজরাটের জন্য কিছুই না করা শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী জানতেন যে তাঁর প্রতারণাপূর্ণ রাজনীতিতে গুজরাটের ভূমি প্রভাবিত হবে না|  

জনতা মোর্চা সরকারের জন্যই গুজরাটের খুব বেশি মানুষকে জরুরিঅবস্থার ভীষণ বাড়াবাড়ির মুখোমুখি হতে হয়নি| অনেক কর্মী গুজরাতে আসেন ও সেখানেইস্থায়ী হন এবং যারা গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছেন সেই মানুষদের কাছে রাজ্যটি একটিআশ্রয়স্থল হয়ে উঠে| প্রায়শই কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সরকার গুজরাটের জনতা মোর্চাসরকারকে সহযোগিতা না করার দোষারোপ করত| (এখানে সহযোগিতা বলতে বোঝাচ্ছে আকংগ্রেসিশক্তিকে উত্খাত করার জন্য গুজরাট সরকারের সমর্থনের অভাব, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জয়ীগুজরাট সরকার যা করতে রাজি ছিল না)| জরুরি অবস্থার সময় মানুষ সেন্সরশিপের বাড়াবাড়িপ্রত্যক্ষ করেছেন|     

কংগ্রেসের ক্ষমতার অপব্যবহার এমন ছিল যে, ইন্দিরা গান্ধীপনেরই আগস্ট উপলক্ষে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বাবুভাই প্যাটেলের অল ইন্ডিয়া রেডিওতেভাষণকেও সেন্সর করার জন্য বলেছেন| (সেই দিনগুলিতে মুখ্যমন্ত্রীরা পনেরই আগস্টউপলক্ষে তাঁদের রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ভাষণ রাখতেন)| যখন এইসবআন্দোলন চলছিল তখন আর.এস.এস.-এর একজন প্রচারক দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যজীবনের ঝুঁকি নিয়েও মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন| তিনি আর কেউ ননআমাদের গুজরাটের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি|  আর.এস.এস.-এর অন্যান্য প্রচারকদের মত নরেন্দ্রভাইকেও আন্দোলনেরজন্য জমায়েত করা, সভা করা, বিভিন্ন রচনার প্রচার করা ইত্যাদির দায়িত্ব দেওয়া হয়|সেই দিনগুলিতে নরেন্দ্রভাই সক্রিয়ভাবে নাথভাই জাগড়ার পাশাপাশি বসন্তগজেন্দ্রগড়করের সঙ্গে কাজ করছিলেন| এমনকি জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার পর থেকেআর.এস.এস.-এরই সাংগঠনিক পরিকাঠামো ও প্রক্রিয়া ছিল যার দ্বারা ক্ষমতালিপ্সুকংগ্রেসের বাড়াবাড়ি ঠেকানো যেত এবং আর.এস.এস.-এর সমস্ত প্রচারক সক্রিয়ভাবে সেইকাজে যুক্ত হয়ে যান| জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কংগ্রেস অনুভব করতেপারে যে, আর.এস.এস.-এরই সেই তেজস্বিতা ও শক্তি রয়েছে যার দ্বারা কংগ্রেসেরঅন্যায্য পদ্ধতিকে ঠেকানো যায়| তাই কাপুরুষতার প্রদর্শন করে কংগ্রেস সরকারআর.এস.এস.-কে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়|   

সেই সময়েই বরিষ্ঠ আর.এস.এস. নেতা কেশবরাও দেশমুখ গুজরাতেগ্রেফতার হন| পরিকল্পনা অনুযায়ী নরেন্দ্রভাই তাঁর সঙ্গে কাজ করার কথা ছিল, কিন্তুদেশমুখের গ্রেফতারের জন্য তা হয়ে উঠেনি| নরেন্দ্রভাই যখন বুঝলেন যে কেশবরাওগ্রেফতার হয়ে গেছেন, তখন তিনি আরেকজন আর.এস.এস. নেতা নাথালাল জাগড়াকে স্কুটারেবসিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান| নরেন্দ্রভাই এটাও অনুভব করলেন যে, কেশবরাও দেশমুখেরকিছু জরুরি কাগজপত্র রয়েছে যা পরবর্তী কাজকর্ম নিরুপণে সহায়ক হবে, সেগুলি উদ্ধারকরা প্রয়োজন| কিন্তু দেশমুখ পুলিশ হাজতে থাকায় সেই কাগজপত্র উদ্ধার করা প্রায়অসম্ভব ছিল| তারপরও নরেন্দ্রভাই সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং মনিনগরের একস্বয়ংসেবক বোনের সহায়তায় সেগুলি উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন| পরিকল্পনা অনুযায়ী সেইভদ্রমহিলা দেশমুখের সঙ্গে দেখা করার জন্য পুলিশ স্টেশনে যান এবং সেই সময়নরেন্দ্রভাইয়ের পরিকল্পনায় সেই কাগজপত্র পুলিশ স্টেশন থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়|জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন ছাপাখানাগুলিকেও সেন্সর করার সিদ্ধান্তনেন| মিশা (এম.আই.এস.এ.) এবং ডি.আই.আর.-এর অধীনে প্রচুর সাংবাদিক গ্রেফতার হন|বিভিন্ন বিদেশি সাংবাদিকের ভারতে আসাও নিষিদ্ধ ছিল, এর মধ্যে ব্রিটিশ সাংবাদিকমার্ক টুলিও ছিলেন| এটা মনে হচ্ছিল যেন সত্য ও সঠিক তথ্যের সম্পূর্ণ বিলুপ্তিঘটেছে| এর পাশাপাশি বেশকিছু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও বন্দী হয়েছিলেন| মনে হচ্ছিল যেনতথ্যের প্রকাশ যেন সম্পূর্ণ অসম্ভব| কিন্তু সেই সময়ই নরেন্দ্রভাই এবং বেশকিছুআর.এস.এস. প্রচারক এই বিপজ্জনক কাজ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন|
 নরেন্দ্রভাই তথ্যের প্রচার ও রচনার বিতরণের জন্যএক উদ্ভাবনাপূর্ণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন| সংবিধান, আইন, কংগ্রেস সরকারের বাড়াবাড়িরতথ্য নিয়ে লেখা রচনা গুজরাট থেকে অন্য রাজ্যে যাওয়া রেলগাড়িতে রেখে দেওয়া হয়| এটাখুবই ঝুঁকির কাজ ছিল, কেননা রেল পুলিশকে বলা ছিল কোনো সন্দেহজনক লোক দেখলেই গুলিকরার জন্য| কিন্তু নরেন্দ্রভাই ও অন্য প্রচারকদের পদ্ধতি ভালোভাবেই কাজ দিল|আর.এস.এস. নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে এবং সেন্সরশিপ যখন বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখনআর.এস.এস. তাদের নিজের নিজের জেলায় স্বয়ংসেবকদের তৈরি করা এবং জন সংঘর্ষ সমিতিরঅংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়| তখন সেইসব স্বয়ংসেবক যারা আন্দোলনের জন্য সম্পূর্ণঅবদানের সিদ্ধান্ত নেন, তাদের পরিবারকে সহায়তা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননরেন্দ্রভাই| তখন নরেন্দ্রভাই কারা স্বয়ংসেবকদের পরিবারকে সহায়তা করতে পারেন সেইসবমানুষদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেন|   

আর.এস.এস. কর্মকর্তাদের নির্মূল করার জন্য পুলিশকে নির্দেশদেওয়ায় নরেন্দ্রভাই আত্মগোপন করে আন্দোলন চালিয়ে যান| সেসময় পুলিশকে জানতে না দিয়েমণিনগরে গোপন বৈঠক করা হয় এবং নরেন্দ্রভাই সেই কাজটি খুব সাফল্যের সঙ্গে করেন|কংগ্রেস সরকারের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে যখন নরেন্দ্রভাই আত্মগোপনে থেকে সক্রিয়ভাবেজড়িত, তখন তিনি প্রভুদাস পাটওয়ারির সংস্পর্শে আসেন| তিনি নরেন্দ্রভাইকে তাঁরবাড়িতে এসে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য বলেন| প্রভুদাস পাটওয়ারির বাড়িতেইনরেন্দ্রভাই জর্জ ফার্নান্ডেজের সঙ্গে সাক্ষাত করেন| তিনিও জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধেআন্দোলনে শামিল ছিলেন| একজন মুসলিম ব্যক্তির ছদ্মবেশে জর্জ ফার্নান্ডেজনরেন্দ্রভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা জানান| তখন নরেন্দ্রভাই জর্জফার্নান্ডেজের জন্য নানাজি দেশমুখের সঙ্গে সাক্ষাতে সমর্থ হন| নরেন্দ্রভাই ওনানাজির সঙ্গে বৈঠকে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সশস্ত্রসংগ্রামের সূচনা করার পরিকল্পনার কথা বলেন| কিন্তু নানাজি ও নরেন্দ্রভাই এইপরিকল্পনা বাতিল করে দেন| তাঁদের মত ছিল, ইন্দিরা গান্ধী যতই সহিংস পদক্ষেপ নেন নাকেন এই আন্দোলন অহিংস হওয়াই উচিত| জরুরি অবস্থার সেই দিনগুলিতে সরকার অল ইন্ডিয়ারেডিওকে তাদের মতামত প্রচারের মেশিন বলেই মনে করত| এছাড়া একটি সাপ্তাহিকও ছিল যাকিনা ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ অবলম্বন করেছিল| অল ইন্ডিয়ারেডিওতে তথ্যের এই সেন্সরের ভূমিকার জন্য জনগণ অবদমিত হয়ে থাকতেন| তখন আকাশবাণীরসামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়, যেখানে জন সংঘর্ষ সমিতি মানুষকেজানানোর জন্য সংবিধান, আইন ও অন্যান্য রচনা জনসমক্ষে পাঠ করে শোনাত|   

আর.এস.এস.-এর অন্যান্য প্রচারকের মত নরেন্দ্রভাইও জন সংঘর্ষসমিতিকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্ত ছিলেন, কেননা আর.এস.এস.-ই তখন একমাত্র সংগঠনছিল যাদের পরিকাঠামো ও পদ্ধতি এই আন্দোলনকে পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত করার মতব্যবস্থা ছিল|  আমরা আজও কংগ্রেসের প্রতি প্রচার মাধ্যমের পক্ষপাতপূর্ণভূমিকার জন্য মনক্ষুন্ন হই| জরুরি অবস্থার সময়ও কংগ্রেস ক্ষমতার অপব্যবহার ওনিজেদের স্বার্থপর প্রচারের জন্য প্রচার মাধ্যমের ব্যবহার করেছে| (এটা আমাদের মনেকরিয়ে দেয় যে, কীভাবে অন্ধ্রপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে এন.টি. রামারাও কংগ্রেসকেহারিয়ে দেওয়া সত্বেও সেই সংবাদ অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রচার করেনি| অন্ধ্রপ্রদেশেররাজ্যপাল যখন তাঁকে শপথ গ্রহণের জন্য আহ্বান করেন, তখন দেশের মানুষ ‘এন.টি.রামারাও’ সম্পর্কে জানতে পারল|) সরকার যেসব নেতাদের কারাগারে আবদ্ধ করেছিল, সেইসবনেতাদের তথ্য সরবরাহে নরেন্দ্রভাইও যুক্ত ছিলেন| তিনি ছদ্মবেশ ধারণে ওস্তাদ ছিলেনএবং গ্রেফতারের ঝুঁকি এড়িয়ে তিনি ছদ্মবেশ ধরে কারাগারে পৌঁছে যেতেন এবং নেতাদেরজরুরি তথ্য দিতেন| একবারের জন্যও পুলিশ নরেন্দ্রভাইকে চিনতে পারেনি| সেই দিনগুলিতে‘সাধনা’ নামের একটি ম্যাগাজিন জরুরি অবস্থা ও সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে শৌর্য দেখাতেসিদ্ধান্ত নেয়| সেই ম্যাগাজিনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আর.এস.এস.-এর পরিকাঠামোবিশেষ কার্যকরী ভুমিকা নেয় এবং অন্যান্য প্রচারকের মত নরেন্দ্রভাইও এতে যুক্তছিলেন|  

জরুরি অবস্থার সময় নরেন্দ্রভাই সহ আর.এস.এস.-এর প্রচারকগণইন্দিরা সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিশেষ ভুমিকা নেন| সেই সময় আর.এস.এস.সংঘর্ষ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তিজ্যোতি’ যাত্রাকে সমর্থন জানায়|  এটা ছিল বাইসাইকেল যাত্রা যেখানে অনেক প্রচারক অংশগ্রহণকরেছিল এবং সাইকেলের মাধ্যমে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে গণতন্ত্রের প্রচারকরেছিল| খুব কম সংখ্যক মানুষই জানেন যে, এই মুক্তিজ্যোতি যাত্রার সূচনা করেছিলনেসর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের কন্যা মনিবেন প্যাটেল|(এটাই হচ্ছে বাস্তব যে,নেহেরু-গান্ধী পরিবার সম্পর্কে প্রতিটি প্রজন্ম যতটুকু জানেন, স্বাধীনতা আন্দোলনেরঅন্যান্য সংগ্রামীদের পরিবার সম্পর্কে মানুষ ততটাই কম জানেন| আজ কংগ্রেস নিজেদেরকেস্বাধীনতা সংগ্রামে যুক্ত থাকার বিষয়টিকে অনেক বেশি করে দেখায়, আর তারা মনিবেনপ্যাটেলের মত মানুষকে উপেক্ষা করছে)| কে.ভি. কামথ তাঁর বইতে নরেন্দ্রভাই সম্পর্কেসঠিকই বলেছেন, জরুরি অবস্থার সময়ই মানুষ নরেন্দ্রভাইয়ের অসাধারণ দক্ষতা নিয়ে জানতেপারেন| প্রচারক হিসেবে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার পাশাপাশি তিনি এটাও সুনিশ্চিতকরতেন যে সংগঠন ও অন্যান্য প্রচারকরা যেন অর্থনৈতিক সমস্যায় না পড়েন|  

কামথ সঠিকভাবেই বলেছেন যে, নরেন্দ্রভাই শুধুমাত্র প্রচারকদেরজন্য অর্থনৈতিক সহায়তার বিষয়টিই ব্যবস্থাকরতেন না, তিনি অন্য দেশে থাকা ভারতীয়দের কাছেও যাতে জরুরি অবস্থার সঠিক তথ্যপৌঁছাতে পারে তাও সুনিশ্চিত করতেন| আজ আমরা নরেন্দ্র মোদির সুশাসনের সুবিধাপাচ্ছি, কিন্তু জরুরি অবস্থার সময়ে কার্যকর্তা হিসেবে তাঁর নিঃস্বার্থ অবদানেরস্বীকৃতি দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ| জনতা মোর্চা সরকারের অধীনে গুজরাটের সাধারণ মানুষেরজীবনমানের উন্নয়নের ভুমিকারও স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ| আজ দেশ চাপ ও জরুরি অবস্থারমত তৈরি করা পরিস্থিতিতে ভুগছে এবং ভারতের মানুষ গুজরাট ও নরেন্দ্রভাই-এর দিকেতাকিয়ে রয়েছে এক নতুন ‘নবনির্মাণ’ আন্দোলনের জন্য, যা আমরা ভারতীয়দেরকে কংগ্রেসদলের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের হাত থেকে স্বাধীন করবে| আমি আশা করছি অদূর ভবিষ্যতেই একনতুন নবনির্মাণ-এর সূচনা হবে|