Our struggle is for the poor. We will ensure that they get their due: PM Modi
For NDA Government, interests of the nation is supreme: PM Modi
Demonetisation is a movement to clean India from corruption and black money: Prime Minister
Government had taken several measures to plug leakages in schemes: PM Modi
Government made an annual saving of Rs 49,500 crore by plugging leakages: PM Modi
Payments under MGNREGS through direct benefit transfer in accounts plugged leakage of Rs 7,633 crore: PM
Lotus was symbolic in first war of independence in 1857 & it blooms even today: PM Modi

 

শ্রদ্ধেয়রাষ্ট্রপতি মহোদয় ২০১৭’র গোড়াতেই সংসদের উভয় অধিবেশনে বক্তব্য রেখেছেন। ভারত কতদ্রুত বদলে যাচ্ছে, দেশের জনশক্তির সামর্থ্য কী? গ্রাম্‌, গরিব কৃষকের জীবন কিভাবেবদলাচ্ছে তার একটি বিস্তারিত চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আমি রাষ্ট্রপতিমহোদয়ের এই অভিভাষণের জন্য ধন্যবাদ জানাতে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমি তাঁকেঅন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

এই আলোচনায়শ্রদ্ধেয় শ্রী মল্লিকার্জুন, তারিক আনওয়ার মহোদয়, শ্রদ্ধেয় শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ,শ্রদ্ধেয় শ্রী তথাগত, শতপত্মি মহোদয়, কল্যাণ ব্যানার্জি মহোদয়, শ্রদ্ধেয়জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং আরও অনেকে অংশগ্রহণ করে আলোচনাকে প্রাণবন্ত করেতুলেছেন। অনেক বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সেজন্য আমি আলোচনায় শরিক হওয়া সকলশ্রদ্ধেয় সদস্যকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

গতকাল ভূমিকম্পহয়েছে। এই ভূমিকম্পের ফলে যেখানে যেখানে সমস্যা হয়েছে আমি তাঁদের প্রতি সমবেদনাজানাই। কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছে।প্রয়োজনে সহায়ক দল সেখানে পৌঁছে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই ভূমিকম্পের সতর্কতা ছিল।কোনও কারণে পৃথিবী মা এত রুষ্ট হয়েছেন।

শ্রদ্ধেয়াঅধ্যক্ষ মহোদয়া, আমি ভাবছিলাম, এই ভূমিকম্প কেন এসেছে? যখন আমরা কোনও দুর্নীতিকেসেবা ভাবি, দুর্নীতির প্রতি নরম ভাব দেখাই, তখন প্রত্যেক মা, এমনকি পৃথিবী মা-ওউষ্মা প্রকাশ করেন। এই ভূমিকম্প তারই প্রকাশ।

সেজন্যইরাষ্ট্রপতি মহোদয় তাঁর অভিভাষণে জনশক্তির স্বরূপ তুলে ধরেছেন। আমরা জানি,গণতান্ত্রিক কিংবা অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাভেদে জনশক্তির মেজাজ বদলে যায়। গতকালআমাদের মল্লিকার্জুন মহোদয় বলেছিলেন, কংগ্রেসের কৃপাতেই দেশে এখনও গণতন্ত্র অটুটরয়েছে আর আপনি প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছেন। বাহ্‌! কী সুন্দর কথা বলেছেন। এদেশেরপ্রতি আপনাদের অশেষ কৃপা, গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আপনারা কত মহান! কিন্তুঅধ্যক্ষ মহোদয়া, ওই দলের গণতন্ত্রকে দেশ ভালভাবেই জানে। গোটা গণতন্ত্র একটিপরিবারে সমর্পিত। আর ১৯৭৫ সালে আপনারাই দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। গোটাভারতকে জেলখানায় পরিণত করেছিলেন। দেশে সর্বজনপ্রিয় নেতা জয়প্রকাশ বাবু সমেত লক্ষলক্ষ মানুষকে গরাদের পেছনে ঠেলে দিয়েছিলেন। খবরের কাগজের অফিসগুলি তালাবন্ধ করেদিয়েছিলেন। তাঁরা কল্পনাই করতে পারেননি যে জনশক্তি কাকে বলে, গণতন্ত্রকে পদপিষ্টকরার সমস্ত চেষ্টা করেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন! এদেশের জনশক্তি, শক্তি ও সামর্থ্যেরবলে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হয়েছে। তাঁদের সমর্থনেই এক গরিব মায়ের ছেলে দেশেরপ্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছে। সেজন্যই রাষ্ট্রপতি মহোদয় জনশক্তির উল্লেখ করে বলেছেন,এটি চম্পারণ সত্যাগ্রহের শতাব্দী বর্ষ। ইতিহাস কেবলই বইয়ের পাতায় বন্দী থাকলে তাআমাদের সমাজ জীবনকে প্রেরণা যোগায় না। প্রত্যেক যুগেই ইতিহাসকে জানা এবং ইতিহাসেবাঁচার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেখানে আমরা ছিলাম কি ছিলাম না, আমাদের কুকুরগুলি কিছিল না, অন্যদের কুকুরগুলি হয়তো ছিল! আমরা কুকুরদের ঐতিহ্যে প্রতিপালিত হইনি।কংগ্রেস পার্টির জন্মের আগে থেকে দেশের কোটি কোটি মানুষের মনে স্বাধীনতা স্পৃহাজেগে উঠেছিল। ১৮৫৭’র স্বাধীনতা সংগ্রামে এদেশের মানুষ, জীবন বাজি রেখে লড়েছিলেন।জাতি-ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে উঠে সকলে মিলে লড়েছিলেন। তখনও পদ্ম ছিল, আজও পদ্ম আছে।

এখানে অনেকেইআছেন, যাঁরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জন্মগ্রহণ করেছেন। সেজন্য আমরা অনেকেই দেশেরজন্য আত্মবলিদানের সুযোগ পাইনি। কিন্তু দেশের জন্য বাঁচার সৌভাগ্য হয়েছে। আর আমরাবাঁচার চেষ্টা করছি।

মাননীয় অধ্যক্ষমহোদয়া, সেজন্য দেশ জনশক্তিতে বলীয়ান। লালবাহাদুর শাস্ত্রীজির একটি নিজস্ব গরিমাছিল। ১৯৬৪-র ভারত-পাক যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়ে দেশবাসী জয়ের আনন্দে মশগুলছিলাম, সেই সময় শ্রদ্ধেয় লালবাহাদুর শাস্ত্রী দেশের সকল জনগণকে একবেলার অন্নত্যাগকরতে বলেছিলেন।

আমরা সরকারগঠনের পর বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ আমরা জানি। অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরাগণতন্ত্র ও তার সামর্থ্যকে প্রায় ভুলে বসেছিলেন, চিনতে পারতেন না। আর গণতন্ত্রেরজন্য সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় এই ভুলে যাওয়া। আমার মতো সাধারণ ব্যক্তিপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কথায় কথায় বলে ফেলেছিলাম, যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা গ্যাসসিলিন্ডারে ভর্তুকি ত্যাগ করুন। ২০১৪’র সাধারণ নির্বাচনের আগে বছরে ৯টি সিলিন্ডারপাওয়া যাবে নাকি ১২টি সিলিন্ডার পাওয়া যাবে – এটা ছিল নির্বাচনী প্রচারের বিষয়। আরতার কিছুদিন পর প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি কথায় কথায় সামর্থ্যবানদের গ্যাস সিলিন্ডারেভর্তুকি ত্যাগ করার আবেদন জানাতেই দেশের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ হাসিমুখে গ্যাসসিলিন্ডারে ভর্তুকি ত্যাগ করলেন।

এর জন্যবর্তমান সরকার এবং এখানে উপস্থিত সকল জনপ্রতিনিধির গর্বিত হওয়া উচিৎ। এই ১ কোটি ২০লক্ষ দেশবাসীর শক্তির পরিচয় আমরা নিজেদের শাসনকালের গোড়াতেই দেখতে পেয়েছি। আমিরাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী অভিভাষণের প্রতি ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে দেশের সকল রাজনৈতিকনেতা ও কর্মীদের বিশেষ করে যাঁরা নির্বাচিত হয়ে শাসনক্ষমতার অধিকারী তাঁদের আহ্বানজানাই; দেশের এই জনশক্তিকে চিনুন, তাহলেই আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জনআন্দোলনেরমাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তুলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে পারব।আমরা এভাবেই কাজ করি। তাই দেখবেন, যতটা সম্ভব ছিল না তার থেকে বেশি সুফল পাওয়াযাবে। দেশের শক্তি অনেক গুণ বেড়ে যাবে। কেউ-ই দেশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চান না।সবাই চান – গরিবের কল্যাণ। সবাই গ্রাম, গরিব ও কৃষকদের স্বার্থে কাজ করতে আগ্রহী।আমি একথা কখনই বলব না যে, আমাদের আগে কেউ দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য কোনই চেষ্টাকরেন্নি। আমি এই সংসদে বারবার বলেছি, লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমার ভাষণে বলেছি,এখন অব্দি যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যতজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, প্রত্যেকেই নিজেরমতো চেষ্টা করে গেছেন।

কিন্তু ওপাশেবসে থাকা মানুষদের মুখ থেকে কখনও শোনা যায়নি যে, দেশে চাপেকর বন্ধু নমক কোনও একস্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, যিনি স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁরা কখনওদামোদর বীর সাভারকরের কথাও বলেননি, যাঁর আন্দামানে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের ফলস্বরূপএদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাঁরা কখনও ভগত সিং, চন্দ্রশেখর আজাদের আত্মবলিদানের কথাউচ্চারণ করেননি। তাঁরা ভাবেন, শুধু একটি পরিবারের চেষ্টাতেই দেশ স্বাধীন হয়েছে।সমস্যার শেকড় সেখানেই।

দেশকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করতে হবে এবং জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে –অমন্ত্রমঅক্ষরম্‌ নাস্তি। নাস্তি মূলম্‌ অনৌষিধম্‌, অযোগ্য পুরুষোনাস্তি যোজকঃ তত্রদুর্লভঃ।

অর্থাৎ, এমনকোনও অক্ষর নেই, যার মধ্যে মন্ত্রের স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এমন কোনও শেকড়নেই, যার মধ্যে ঔষধি হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না। এমন কোনও মানুষ নেই, যিনি সমাজএবং দেশকে কিছুই দিতে পারেন না। প্রয়োজন শুধু অনুঘটকের। এই বিশ্বে প্রকৃতিপ্রত্যেক শক্তিকে ভারসাম্য রেখে যুক্ত রাখে। আমরাও তাই জনশক্তির ভরসায় দেশকে এগিয়েনিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।

স্বচ্ছ ভারতঅভিযান, আমি অবাক হয়ে যাই, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এত বছর পেরিয়ে গেছে, আমরা আজও যদিপরিচ্ছন্নতাকে অগ্রাধিকার না দিই, তবে কবে দেব? আমরা মহাত্মা গান্ধীর নাম উচ্চারণকরে গর্ববোধ করি। গান্ধীজি বলতেন, স্বাধীনতার আগে আমি যা পেতে চাই, তা হলপরিচ্ছন্নতা। আমরা গান্ধীজির এই ইচ্ছাকে দেশের সামনে তুলে ধরেছি। আমাদের আগে কোনওসরকার, কোনও সাংসদ অধিবেশনে পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিয়ে এত আলাপ-আলোচনা-সমালোচনাহয়নি। আমি বুঝতে পারি না, এই পরিচ্ছন্নতাকে আমরা কেন রাজনৈতিক কর্মসূচি বানাবো?আপনাদের মধ্যে এমন কে আছেন, যিনি নোংরার মধ্যে থাকতে চান? সরকার কিংবা বিরোধীপক্ষের কোনও সাংসদই তা চান না। তা হলে আমরা মিলেমিশে এক স্বরে সমাজকে এই পবিত্রকর্মযজ্ঞে আহ্বান করবো না কেন, গান্ধীজির স্বপ্নকে সফল করার জন্য এগিয়ে আসব নাকেন? কে আটকাবে?

আর সেজন্যইমাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়া, এই অপার জনশক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণেযে আহ্বান রয়েছে তাঁর পাশাপাশি বাজেট প্রসঙ্গও রয়েছে। বাজেট নিয়ে অর্থমন্ত্রীযথাসময়ে বিস্তারিত বলবেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে একটা প্রশ্নের জবাব আমি দিতে চাই।প্রশ্নটি হ’ল, এবারের বাজেট এত আগে কেন পেশ করা হ’ল?

ভারত একটিকৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের প্রায় সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেন কৃষিনির্ভর। আর প্রতি বছরকৃষির পরিস্থিতি দীপাবলীর মধ্যেই বোঝা যায়। তা হলে আমরা ব্রিটিশ শাসকদের চালু করাঐতিহ্য মেনে কেন চলবো?

প্রতি বছর মেমাসের মধ্যেই আমাদের বাজেট প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যায়। পয়লা জুনের পর ভারতে বর্ষাকালশুরু হয়ে যায়। ফলে, প্রায় তিন মাস বাজেট বাস্তবায়ন স্থগিত থাকে। তারপর, আমাদেরহাতে কাজ করার জন্য হাতেগোণা কয়েক মাসই শুধু বাকি থাকে। তখন তাড়াহুড়োয় কিভাবে কাজহয়, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কিভাবে বিল কাটা হয় আর কিভাবেখাতায়-কলমে টাকা খরচ দেখানো হয় তা সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। এ বিষয়ে আমি কারওসমালোচনা করতে চাই না। অনেকে এটাই জানেন না যে, আগে প্রতি বছর বিকেল ৫টায় কেনবাজেট পেশ করা হতো। কারণটা হ’ল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যখন বাজেট পেশ করা হ’ত সেইসময় থেকে ভারতীয় সময়ের পার্থক্য। আপনার হাতের ঘড়িকে উল্টো করে ধরুন, তা হলে যে সময়দেখবেন সেটা যুক্তরাজ্যের সময়।

অটলজিপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবার বাজেট পেশের ঐ অযৌক্তিক সময় বদলানো হয়। আমারবিরোধী পক্ষের বন্ধুরা যখন সরকারে ছিলেন, আপনারা বাজেটের সময় নিয়ে একটি কমিটি গঠনকরেছিলেন। সেই কমিটির রিপোর্ট আমি পড়েছি। আপনারাও এই সময় বদলাতে চেয়েছিলেন। কিন্তুআপনাদের অগ্রাধিকার ভিন্ন ছিল বলে আপনারা ঐ কমিটির প্রস্তাব বাস্তবায়িত করতেপারেননি। কিন্তু আপনারা নিজেদের সময় যে চেষ্টা করেছিলেন, সেটাকে গর্বের সঙ্গেবলুন। আপনারা এর রাজনৈতিক সুফল পান। এটাও আপনারা ভুলে যান, এখন আমি মনে করিয়েদিলাম, আপনারা এরও রাজনৈতিক সুফল গ্রহণ করুন।

রেলওয়েসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা বাজেট বিতর্কের সময়ই যথাযথ হবে। তবে, একটা কথা মনেরাখবেন, ৯০ বছর আগে যখন আলাদা রেল বাজেট ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তখন পরিবহণেরপ্রধানতম মাধ্যম ছিল রেল। আজ এর পাশাপাশি আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ ব্যবস্থারয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সামগ্রিক পরিবহণ ব্যবস্থা নিয়ে একসঙ্গে না ভাবব,ততক্ষণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হব। আমরা এইসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছি। রেলএখনও গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ ব্যবস্থাই রয়েছে। এর বেসরকারিকরণ বা এর স্বতন্ত্রতা নিয়েকোনও সমস্যা নেই। আমরা একটি সংহত পরিবহণ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গহিসেবে রেলকে প্রধান্য দিয়ে আসছি। আমরা সরকারে আসার পর থেকে রেল বাজেট বরাদ্দেউত্তরোত্তর বৃদ্ধি হয়েছে।

গত বছর রেলবাজেট পেশ করার সময় আমাদের রেলমন্ত্রী গৌড়াজি বলেছিলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলির করারেল সংক্রান্ত প্রায় ১৫০০টির বাস্তবায়ন স্থগিত রয়েছে। সংসদে যাঁরা বেশি মুখরতাঁদের খুশি করার জন্য রেল বাজেটে এমন অনেক ঘোষণা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে, যেগুলিবাস্তবায়নের কোনও উদ্যোগই পূর্ববর্তী সরকারগুলি নেয়নি। আমরা নিজেদের রাজনৈতিকলাভ-লোকসানের কথা বিবেচনা না করে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে আপনাদের ঘোষণা করাপ্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছি। দেশে যে ভুল কর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, আমলাতন্ত্রকেউপযোগী করে তোলার জন্য সেসব লালফিতের ফাঁস আলগা করার কাজ আমরা জোরকদমে এগিয়ে নিয়েযাব। আমরা হাততালির জন্য ফাঁকাবুলির পথ অবলম্বন করব না।

দেশের সাধারণমানুষের আশা-আকাঙ্খা পূরণের স্বার্থে আমরা ইতিবাচক কাজ করছি। বিমুদ্রাকরণ নিয়েআলোচনার জন্য সরকার প্রথম দিন থেকেই প্রস্তুত। কিন্তু আপনারা অপেক্ষা করছিলেন। ব্যাঙ্কেও এটিএম-এ মানুষের লাইন ও ভিড় দেখে ভাবছিলেন, বড় কোনও অঘটন ঘটলে আমাদের চেপে ধরবেন!সেই সময়ে এ বিষয়ে আলোচনা করলে মোদীর রাজনৈতিক লাভ হবে এই ভেবে আপনারা বিষয়টিকেনানাভাবে এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। সেজন্য আপনারা আলোচনার পথে না গিয়ে টিভি বাইট দিতে অধিকআগ্রহী ছিলেন। আমি খুশি যে, এবার আপনাদের সামান্য সুমতি হয়েছে। আপনাদের বক্তব্যেএই বিষয়টিকেও স্পর্শ করেছেন। দেখুন কত পরিবর্তন এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যতটাপুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিষয়টিকে দেখা উচিৎ ছিল, এখনও আপনারা সেভাবে দেখেননি। ২০১৪সালের মে মাসের আগের সময়টির কথা ভাবুন। কয়লা, দুর্নীতি, টু-জি দুর্নীতি, জলদুর্নীতি, বায়ু দুর্নীতি, আকাশ দুর্নীতি – কিসে কত টাকার নয়ছয় হয়েছে। তখন সংসদেবিরোধী পক্ষ আওয়াজ তুলতো – কবে দেশের মানুষের কত কোটি টাকা গচ্চা গেছে। আমি খুশি,আজ আপনারা এরকম কোনও দুর্নীতি কিংবা লোকসান নিয়ে আওয়াজ তোলার সুযোগ পাননি, আপনারাজানতে চেয়েছেন, কোন্‌ উৎস থেকে কত টাকা রাজকোষে জমা পড়েছে। কোনও প্রধানমন্ত্রীরজীবনে এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়া ভাগ্যের বিষয়। বুঝতে পারছি, আমরা কত সঠিকপদক্ষেপ নিয়েছি!

শ্রদ্ধেয়মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেছেন, কালো সম্পত্তির সিংহভাগই তো হীরে জহরত, সোনা-রূপো আরবিষয় সম্পত্তি রূপে রয়েছে। আমি খাড়্গেজির সঙ্গে একমত। কিন্তু খাড়গেজির উদ্দেশেসংসদের সকল সদস্যদের প্রশ্ন, এই জ্ঞান আপনার কবে হয়েছে? একথা কেউ অস্বীকার করতেপারবেন না যে দুর্নীতি শুরু হয় নগদ টাকার মাধ্যমে। পরিণতি হয় বেনামী বিষয়সম্পত্তি, গয়নাগাটি ও সোনা-রূপায়। আপনারা বলুন, ১৯৮৪’তে শ্রদ্ধেয় রাজীব গান্ধীপণ্ডিত নেহরুর থেকেও বেশি সংখ্যাধিক্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সংসদের উভয়কক্ষে আপনাদের সংখ্যাধিক্য ছিল, পঞ্চায়েত থেকে পার্লামেন্ট পর্যন্ত সর্বত্রআপনাদের সংখ্যাধিক্য ও জয়জয়কার।

১৯৮৮’তে আপনারাবেনামী সম্পত্তি বিষয়ক আইন পাশ করেছেন, তা হলে আজ আপনার যে জ্ঞান হয়েছে, ২৬ বছরআগে তা নিয়ে আওয়াজ তোলেন নি কেন? এমন তো নয় যে, ২৬ বছর আগে দুর্নীতি কম ছিল? তাহলে আপনারা এই আইনটি পাশ করার পরও চেপে রেখেছিলেন কেন? নোটিফাই করেননি কেন? দেশ তাহলে অনেক আগেই দুর্নীতিমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠতো! কাদের স্বার্থে ওই আইন চেপেরাখা হয়েছিল? কোন্‌ পরিবারের …… আপনাদের এইপ্রশ্ন থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। দেশকে জবাব দিতে হবে। আজ আমি এইসংসদের মাধ্যমে দেশের সকল দুর্নীতিবাজকে বলতে চাই, আপনারা যত বড়ই হোন না কেন,গরিবের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই হবে। আমি এই পথ থেকে পিছিয়ে যাব না। আমি গরিবদের জন্যলড়ছি, লড়ব!

এদেশেপ্রাকৃতিক সম্পদের কোনও অভাব কোনও দিনই ছিল না, আজও নেই। এদেশে মানবসম্পদের অভাবওকোনও দিন ছিল না, আজও নেই! কিন্তু দেশের মাধ্যে এমন এক শোষক শ্রেণী গড়ে উঠেছে,দুর্নীতিবাজ শ্রেণী গড়ে উঠেছে, তাদের লুন্ঠনের ফলস্বরূপ দেশ আজ উন্নয়নের যেউচ্চতায় পৌঁছনো উচিৎ ছিল, সেখানে পৌঁছয়নি। একটি সমান্তরাল অর্থব্যবস্থা গড়েউঠেছিল।

এমন নয় যে, এবিষয়ে আপনাদের সরকার কিছুই জানতো না। আপনাদের সরকার নিযুক্ত নানা কমিটিও এ বিষয়েআপনাদের অনেক পরামর্শ দিয়েছে। ইন্দিরাজির আমলে শ্রদ্ধেয় যশবন্ত রাও চৌহান এই বিষয়নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের কথা চিন্তা করে আপনারা তা বাস্তবায়িতকরেননি। আপনা নির্বাচনের পরিণাম নিয়ে ভাবি না, দেশের কথা ভাবি। সেজন্য আমরা কঠিনসিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। নগদ লেনদেনে রাশ টানা না গেলে, ই-ট্রান্সফারকে জীবনেরঅবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে তুলতে না পারলে, এই ব্যবস্থায় কঠিন আঘাত না করতে পারলে কোনওদিনই আমরা এই দুর্নীতির গড্ডলিকা প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারতাম না।

আপনারা কিভাবেদেশ চালিয়েছেন? আমার মনে হয় কয়েকটি দল চার্বাকের মন্ত্রকে আপন করে নিয়েছেন।চার্বাক বলতেন, য়বজ্জীবেৎ, সুখম জীরেৎ। ঋন্ত কৃত্বা, ঘৃতম পিবেৎ।।/ভস্মিভূতস্যদেহস্য।/পুনরাগমনন কুতঃ? যতদিন বাঁচো মজা করো। বাঁচো, যতদিন বাঁচো আয়েস করো। ঋনকর, ঘি খাও। তখনকার ঋষিরা ঘি’র বেশি আর কিছু পান করার কথা বলেননি, আজ হলে হয়তোঅন্য কিছু পান করার কথা বলতেন।

এই দর্শনঅবলম্বন করে কেউ কেউ ভাবেন, অর্থ ব্যবস্থা ভালোই চলছিল, আপনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েসব ওলোট-পালোট করে দিলেন কেন? একথা ঠিক। আমরা অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাই। কখনওডাক্তার বলেন, শল্য চিকিৎসা ছাড়া কোনও উপায় নেই। কিন্তু তার আগে ডায়াবেটিসনিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আরও এটা-সেটা ঠিক করতে হবে। বিমুদ্রাকরণের জন্য এই সময় দেশেরঅর্থ ব্যবস্থা যথাযথ ছিল। দুর্বল থাকলে, আমরা এত সাফল্যের সঙ্গে এত বড় শল্যচিকিৎসা করতে পারতাম না।

আমরা কোনওতাড়াহুড়ো করিনি। আমাদের দেশে সারা বছরের অধিকাংশ লেনদেন দীপাবলির দিনই হয়ে যায়।অর্থাৎ, সারা বছরে ৫০ শতাংশ আর দীপাবলির দিন ৫০ শতাংশ। প্রত্যেক ব্যবসা ঐ সময়তুঙ্গে থাকে। তারপর ১৫ দিন ব্যবসায়ী ও দোকানদারেরা শ্লথ হয়ে পড়েন, ছুটি নেন,বেড়াতে যান। আমরা সেই শ্লথ সময়টাকেই বেছে নিয়েছিলাম, যাতে দেশের কোথাও বাণিজ্যিকলেনদেনে তেমন বড় কোনও ক্ষতি না হয়। ৫০ দিনের মধ্যে তো আবার সব প্রায় ঠিকই হয়েযাবে। আমাদের হিসেব যে ঠিকই ছিল তা আপনারা এখন অনুভব করছেন।

আপনারা জানেন,একটা সময় ছিল আয়কর বিভাগ নিজেদের খেয়াল-খুশি মতো কাজ করতো। আয়কর আধিকারিকরা অভিযানচালিয়ে অনেককে ধমকাতেন। তারপর কিভাবে সব সমস্যার সমাধান হতো সেই ইতিহাস আর তুলেধরতে চাই না।

বিমুদ্রাকরণেরপর সবকিছু এখন নথিভুক্ত হচ্ছে। কোথা থেকে এসেছে, এ এনেছে, কোথায় রেখেছে। ইতিমধ্যেইসেগুলির মধ্যে থেকে শীর্ষনামগুলিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেটা মাইনিং করে বের করেনেওয়া হয়েছে। আজ আর আয়কর আধিকারিকদের অভিযানে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাঁরা এসএমএসকরে ডিটেইলস্‌ জানতে চাইবেন। এভাবেই আমরা কার্যকরী ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে সাফল্যেরপথে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।

নতুন করেবেনামী সম্পত্তি আইন পাশ হয়েছে, বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়ে গেছে। এখন খাড়গেজি যা যাবলেছেন, সব আমরা করে দেখাবো। আপনার পরামর্শ শিরোধার্য। যাদের কাছে বেনামী সম্পত্তিরয়েছে, তারা শীঘ্রই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টটের কাছে গিয়ে জানুন, কিভাবে নিজেরমানসম্মান রক্ষা করে মূল ধারায় ফিরে আসবেন। আসুন, গরিবের উন্নয়নে আপনারাও কিছুঅবদান রাখুন।

তাড়াহুড়োয় কোনওসিদ্ধান্ত আমরা নিই নি। সরকার গঠনের পরই আমরা সবার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠক করে ‘সিট’গঠন করেছি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করেই বিদেশ থেকে কালো টাকা উদ্ধারেরউদ্দেশ্যে আমরা ‘সিট’ গঠন করেছি সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, 26 March, 2014, Since 1947 for 65Years nobody thought of bringing the money stays away in the ForeignBanks to the country. The Government has failed in its role for 65 Years. ThisCourt feels that you have failed in your duty. So is the given order for theappointment of committee headed by the former judges of this Court. Three yearshave passed, but you have not done anything to implement the order. What haveyou done? Except for filing one report you have done nothing.

২০১৪’র ২৪মার্চ সুপ্রিম কোর্ট পূর্ববর্তী সরকারকে এই আদেশ জারি করেছিল। সেজন্যই তো বলছি,তখন আওয়াজ উঠতো, কত গেছে, আর আজ আওয়াজ উঠছে, কত এসেছে? এখন দেখবেন শুধুই আসবে।বিদেশে জমা কালো টাকা নিয়ে আমরা এত কঠিন আইন পাশ করেছি যে দেখবেন একে একে সবাই পথেআসবেন। না হলে, তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। সাজাও ৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০বছর করা হয়েছে। আগে যে কর ফাঁকির জায়গা ছিল মরিশাস, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি, আপনাদেরনিয়মের ফাঁক গলে যেসব সুবিধা নেওয়া যেত, আমরা কথা বলে সেসব দেশের সরকারকে আমাদেরপরিস্থিতি বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। এমনকি, সুইজারল্যান্ড সরকারকেও বোঝাতে পেরেছি।তারা এখন রিয়েল টাইম ইনফরমেশন দেবেন। যে কোনও ভারতীয় নাগরিক সেসব দেশের ব্যাঙ্কেটাকা রাখলে ভারত তা জেনে যাবে। আমরা আমেরিকা সহ অনেক দেশের সঙ্গে এই বিষয়ে সমঝোতাকরেছি।

তেমনই সম্পত্তিবিক্রির ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকার বেশি নগদ নেওয়া চলবে না – এই নিয়ম আমরা জারিকরেছি। রিয়েল এস্টেট বিল পাশ করেছি। গহনা বাজারেও ১ শতাংশ এক্সাইজ চালু করেছি,যাতে সবকিছুকে সরলীকরণ করা যায়, কাউকে সমস্যায় ফেলতে চাই না।

আপনারা অনেকেইআমাকে ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছেন, শাসক পক্ষ এবং বিরোধী পক্ষের অনেকেই চিঠি দিয়েছেন,ফলস্বরূপ, আমরা ২ লক্ষ টাকার বেশি দামের গহনা কেনার ক্ষেত্রে ক্রেতার প্যান নথিভুক্তকরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যারা কালো টাকা আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভাষণ দেন, তারাপ্যান নথিভুক্ত করার নিয়ম রদ করার সুপারিশ করলে আমি অবাক হই। তা হলে তো আর গহনায়কালো বাজারীকে লাগাম পরানো যাবে না। দেশের ভাল, গরিব মানুষের ভাল চাইলে এই নিয়মমেনে নিতেই হবে।

২ লক্ষ টাকারথেকে দামি কোনও জিনিস আর ১০ লক্ষ টাকার থেকে দামি গাড়ির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ অতিরিক্তকর জারি করা হয়েছে। আমরা আয়কর ঘোষণা কর্মসূচিও ডিক্লিয়ারেশন স্কিম-ও এনেছি। এখনপর্যন্ত এই স্কিমেই মানুষ সর্বাধিক টাকা ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যেই আমরা ১১ হাজারেরওবেশি পুরনো আইন বাতিল করেছি। এগুলি সব পরস্পর বিরোধী ছিল। নোট বাতিলের পর কেউ বলেন১৫০ বার, আবার কেউ বলেন ১৩০ বার আমরা নাকি নিয়ম বদলেছি। কেউ সঠিক সংখ্যাটি বলতেপারেননি, বলিহারি আপনাদের স্মৃতিশক্তি!

আমরা আসলে সেইসময় প্রতি পদক্ষেপে জনগণের সুবিধার কথা ভেবে পথ খোঁজার চেষ্টা করছিলাম। আর যারাযুগ যুগ ধরে লুন্ঠনবৃত্তি চালাচ্ছেন, তারাও নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করছিলেন,সেগুলি রুখতেও আমাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে। লড়াইয়ের সময় ছিল তখন। কেউ ডালে ডালেতো কেউ পাতায় পাতায় – এই খেলা চলছিল যেন!

এদেশে যখনরাজ-রাজাদের শাসন ছিল, তখনও নানা গরিব কল্যাণ প্রকল্প চলতো। স্বাধীনতার পরও ‘কাজেরবদলে খাদ্য’ নামে বেশ কিছু প্রকল্প চলেছে। তারপর ন’বার নাম বদলে এমজিএনআরইজিএহয়েছে। সারা দেশ ঘুরেছি আমি, পশ্চিমবঙ্গে যখন কম্যুনিস্ট শাসন ছিল তারা এক রকম কাজকরেছেন, মহারাষ্ট্রে শরদ পাওয়ার সরকারের সময় কাজ করেছেন; গুজরাটের কংগ্রেস সরকারওএ ধরনের প্রকল্প চালিয়ে। স্বাধীনতার পর প্রত্যেক দেশেই এ ধরনের কাজ হয়েছে,প্রত্যেকেই করেছেন, এতে নতুন কিছু নেই, শুধু নাম বদল হয়। কিন্তু দেশবাসী জেনেআশ্চর্য হবেন এমজিএনআরইজিএ চালু হওয়ার পর থেকে এতেও ১০৩৫ বার পরিবর্তন করা হয়েছে।১০৩৫ বার নিয়ম বদলেছে। আপনারা কখনও আয়নায় তাকিয়ে দেখুন। এতে তো লড়াই ছিল না। এতচাপে কাজ করতে হয়নি। তা হলে দীর্ঘকাল ধরে চালু থাকা এমজিএনআরইজিএ-তে এতবারপরিবর্তন আনতে হয়েছে কেন? সেজন্যই আমরা এ নিয়ে আইন পাশ করেছি। সেই আইন ১০৩৫ বারপরিবর্তন করা হয়নি।

আমি এখানে কাকাহাথরসীর কয়েকটি পংক্তি শোনাতে চাই। এর সঙ্গে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনকে জুড়বেন না।কাকা হাথরসী লিখেছিলেন, ‘অন্তর পট মেঁ খোজিয়ে, ছিপা হুয়া হ্যাঁয় খোট’ একটু পরইতিনি লেখেন, ‘মিল জায়েগী আপকো, বিলকুল সত্য রিপোর্ট’।

মাননীয়াঅধ্যক্ষ মহোদয়া, আমি আরেকটি বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সরকার নিয়মদ্বারা পরিচালিত হয়, সাংবিধানিক দায়িত্ব নিয়ে চলে। যেসব নিয়ম আপনাদের জন্য ছিল,সেগুলি আমাদের জন্যও রয়েছে। কিন্তু পার্থক্য গড়ে দিয়েছে কর্মসংস্কৃতি। নীতিসমূহেরশক্তিও নিয়ত বা ইচ্ছাশক্তির সঙ্গে যুক্ত। নিয়তে খোট বা ত্রুটি থাকলে নীতিসমূহেরশক্তিও হ্রাস পেতে থাকে। সেজন্য আমাদের দেশে সেই কর্মসংস্কৃতিকে বোঝার প্রয়োজনরয়েছে। আমরা যখনই কিছু বলি, বিরোধী পক্ষ বলেন, এটা তো আমাদের সময় ছিল। সেজন্যি আমিআপনাদের মাঠে খেলতে চাই। আপনারা এত কিছু করতে চাইলে পরিণাম এমন হ’ল কেন? এমন তো নয়যে আপনাদের জ্ঞানের অভাব ছিল। এমনও নয় যে, গতকালই আপনাদের জ্ঞান হয়েছে। আপনারাজানতেন, কিন্তু মহাভারতে বলা হয়েছে, ‘জানামি ধর্মম্‌ ন চ মে প্রবৃতি/জানামিঅধর্মম্‌ ন চ যে নিবৃত্তিঃ। ধর্ম কাকে বলে? সেটা আপনারা জানেন, কিন্তু তা আপনাদেরপ্রবৃত্তি ছিল না। অধর্ম কাকে বলে, তাও আপনারা জানতেন – কিন্তু তাকে ত্যাগেরসামর্থ্য ছিল না। আমাকে বলুন, ন্যাশনাল অপ্টিকাল ফাইবার নেটওয়ার্ক নিয়ে আমি এখনযাই বলতে যাই না কেন, আপনারা বলে উঠতে পারেন – এটা তো আমরা শুরু করেছি। হ্যাঁ,আপনারাই শুরু করেছেন, আমি সেখান থেকেই বলা শুরু করছি। ২০১১ থেকে ২০১৪’র মধ্যে এইসংস্রথা মাত্র ৫৯টি গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক যুক্ত করা হয়েছে, আর তাতেও লাস্টমাইল কানেক্টিভিটির ব্যবস্থা ছিল না। আদায়ও সম্পূর্ণ কেন্দ্রীভূত ছিল। এর কারণআমরা জানি। আমরা সরকারে আসার পর কর্মসংস্কৃতিতে কেমন বদল এসেছে। আমরা রাজ্যগুলিকেসঙ্গে নিয়ে শেষতম বিন্দু পর্যন্ত সংযোগকে দেশের প্রতিটি স্কুল, হাসপাতাল, প্রত্যেকপঞ্চায়েতে পৌঁছে দিতে চাই। এই প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু প্রক্রিয়রমেন্টকেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রেখে আমরা বিকেন্দ্রীকরণ করে দিয়েছি। পরিণাম-স্বরূপ, আমরাইতিমধ্যেই দেশের ৭৬ হাজার গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক বিছিয়ে শেষতম দূরত্বসংযুক্ত করেছি।

দ্বিতীয়ত,কিছুক্ষণ আগেই আপনাদের বক্তব্যে লেস-ক্যাশ সোসাইটি বা ক্যাশ-লেস সোসাইটি প্রসঙ্গেআমাদের সমালোচনা করেছেন। মানুষের কাছে কী আছে? আমি তো ২০০৭ সালের পর থেকে প্রত্যেকনির্বাচনের আগে গ্রামে গ্রামে আপনাদের বলতে শুনেছি, রাজীব গান্ধী দেশে কম্পিউটারবিপ্লব এনেছেন, মোবাইল ফোন এনেছেন, গ্রামে গ্রামে কানেক্টিভিটি স্থাপন করেছেন। তাহলে আমি জনগণের সুবিধার্থে ঐ মোবাইল ফোনকে ব্যাঙ্কে পরিণত করার কথা বললে আজ উঠেদাঁড়িয়ে বলছেন, সবার হাতে মোবাইল ফোন কোথায় আছে? আপনারাই এতদিন ধরে বলেছেন যে, এতকাজ করেছেন, আমি শুধু এতে পরিষেবা যুক্ত করতে চাইলে এখন আপনারা বলছেন এতজনের হাতেমোবাইল ফোন নেই। এ কেমন কথা? ঠিক আছে, যদি মনে করি মাত্র ৪০ শতাংশ দেশবাসীর মোবাইলফোন আছে, তা হলে ঐ ৪০ শতাংশ মানুষকে আমরা আধুনিক পরিষেবার সঙ্গে কেন যুক্ত করব না?বাকি ৬০ শতাংশকে না হয় পরে যুক্ত করবো! ডিজিটাল কারেন্সির স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজকোথাও থেকে তো শুরু করতে হবে। আজ আমাদের এক একটি এটিএম সামলাতে গড়ে ৫ জন করেনিরাপত্তা কর্মী লাগে। টাকা-পয়সা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে প্রতিদিনদেশে সব্জি ও দুধ আনা-নেওয়ার থেকে অনেক বেশি খরচ হয়। কাজেই যত জনের হাতে মোবাইলফোন আছে শুধু তাঁরাই যদি এখন ব্যাঙ্কে না গিয়ে ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে ব্যাঙ্কেরকাজকর্ম সারতে পারেন, তা হলে জনগণ ও সরকার উভয়েরই অনেক সাশ্রয় হবে। গতকাল শুনলামএকজন সব্জি বিক্রেতা ডিজিটাল লেনদেন শুরু করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনিবলেছিলেন, তাঁর সারা বছরের গ্রাহক প্রায় নির্দিষ্ট। তাঁরা প্রত্যেকেই সারা বছরে১০-১২ হাজার টাকার সব্জি কেনেন। এতদিন কোনও ম্যাডামের ৫২ টাকা হলে তিনি ৫০ টাকাদিয়ে বলতেন ২ টাকা খুচরো নেই। এখন ভীম অ্যাপ লাগানোড় পর ৫২ টাকাই পাবেন। এভাবেসারা বছরে তিনি গ্রাহক পিছু গড়ে ৮০০-১০০০ টাকা বেশি পাবেন।

দেখুন,দৃষ্টিভঙ্গী কিভাবে বদলাচ্ছে। সেজন্যই বলি, আপনারা মোদীর বিরোধিতা করুন, এটাআপনাদের কাজ, করাই উচিৎ। কিন্তু দোহাই আপনাদের, দেশ ও সমাজের জন্য যা কল্যাণকর,তার বিরোধিতা করবেন না!

কর্মসংস্কৃতিকিভাবে বদলায়? দেশে সড়ক নির্মাণের কাজ তো আর আমরাই প্রথম শুরু করিনি! টোডরমলের সময়থেকে, শেরশাহ সুরীর সময় থেকে সড়ক নির্মাণ শুরু হয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হ’লকর্মসংস্কৃতিতে। আমাদের আগের সরকারের সময়ও সড়ক নির্মাণের কাজ হতো প্রতিদিন গড়ে ৬৯কিলোমিটার। আমরা আসার পর সেই কাজের গতি বেড়ে হয়েছে দৈনিক ১১১ কিলোমিটার – পার্থক্যএখানেই।

আমরা সড়কনির্মাণে মহাকাশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছি। মহাকাশ প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়মিতফটোগ্রাফি হয়, তদারকি হয়। রেলের কাজে ড্রোন ব্যবহার করা শুরু করেছি। ড্রোনওফটোগ্রাফি করে। এভাবে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা সুফল পেয়েছি।

গ্রামীণ আবাসযোজনাও আপনারা চালু করেছেন। কিন্তু আপনাদের সময়ে গড়ে সারা বছরে ১০৮৩০০০ ঘরবানাতেন। আমরা বছরে ২২২৭০০০ ঘর বানিয়েছি। ন্যাশনাল আরবান রুরাল মিশন প্রতি মাসে৮০১৭টি বাড়ি বানাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ১৩৫৩০টি বাড়ি তৈরি হয়েছে।

রেলে আপনাদেরসময় ব্রডগেজ হ’ত এক বছরে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজারকিলোমিটার। আমাদের লক্ষ্য এক বছরে ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটারে পরিণত করা। এইপরিবর্তনগুলি হঠাৎই চলে আসেনি। আমরা পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি, লক্ষ্য ও সময়সীমাঠিক করে দিচ্ছি, তদারকি বাড়িয়েছি। এজন্য সকলকে পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমাদেরশাস্ত্রে বলেছে –

উদ্যমেন হিসিধ্যন্তি কার্যাণি ন মনোরথৈঃ।

ন হি সুপ্তস্যহিংহস্য প্রবিশন্তি মুখে মৃগাঃ।।

উদ্যোগেরমাধ্যমে কার্যসিদ্ধি হয়, শুধু ভাবলে হয় না, শুয়ে থাকা সিংহের মুখে নিজ থেকে কোনওহরিণ এসে প্রবেশ করে না, তাকে শিকার করতে হয়।

মাননীয় অধ্যক্ষমহোদয়া, মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা জানি যে, রাজ্যগুলির বিদ্যুৎ পর্ষদ নিয়েসকল রাজ্য সংকটে। সেজন্য আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ঘোষণা করেছি। কাজ শুরুহয়েছে। বিগত দুই বছরে প্রায় সর্বত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কনভেনশনাল এনার্জিযুক্ত হয়েছে, ট্রান্সমিশন লাইন বাড়ানো হয়েছে, সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরুহয়েছে। ২০১৪-এ যা ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট ছিল এখন তা ৯ হাজার ১০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেগেছে। ডিসকম প্রকল্প উদয় যোজনার মাধ্যমে সাফল্য এলে রাজ্যগুলি মোট ১ লক্ষ ৬০ হাজারকোটি টাকা সাশ্রয় করবে। কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে আরও ১ লক্ষ ৬০ হাজার কোটিটাকা দেবে। সেই টাকা রাজ্যগুলি উন্নয়নের কাজে ব্যয় করতে পারবে।

আগে রাজ্যগুলিনিকটবর্তী কয়লাখনি থেকে কয়লা পেত না। দূরের কয়লাখনি থেকে কয়লা পরিবহণে রেলের লাভেরকথা ভেবে নাকি এই ব্যবস্থা জারি ছিল। আমরা এই ব্যবস্থা বদলে নিকটবর্তী কয়লাখনি থেকেকয়লা পাওয়ার নিয়ম চালু করায় বছরে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে।

আপনাদেরশাসনকালে এলইডি বাল্বের দাম ছিল ৩০০-৩৫০-৩৮০ টাকা। আমরা দেখেছি, এর মাধ্যমে অনেকবিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। সেজন্য আমরা মিশন রূপে কাজ শুরু করে বাল্বের দাম কমিয়েইতিমাধ্যেই ২১ কোটি এলইডি বাল্ব লাগানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছি। এতে সারা দেশেরবিদ্যুৎ গ্রাহকদের ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। কোনও সরকার যদি এত টাকাউপভোক্তাদের দেওয়ার কথা ঘোষণা করত, তা হলে সারা দেশে খবরের কাগজে শিরোনাম হতো।আমরা সেপথে না হেঁটে সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ের কথা ভেবেছি। কর্মসংস্কৃতি বদলালেকেমন পরিবর্তন আসে এটা তার একটা উদাহরণ।

এখানে আমাদেরবিপক্ষের নেতা তপশিলি জাতি সম্পর্কিত বাজেট নিয়ে সমালোচনা করছিলেন। কিন্তু চালাকিকরে ২০১৩-১৪’র পরিসংখ্যান জানাননি। চেপে গেছেন। ২০১২-১৩’য় তপশিলি জাতিসাব-প্ল্যান-এ মোট ৩৭ হাজার ১১৩ কোটি ছিল, ২০১৩-১৪’য় ৪১ হাজার ৫৬১ কোটি – ৩৩.৭শতাংশ বৃদ্ধি। সেজন্যই বলি, সত্য কথা বলা ও শোনার হিম্মত রাখুন। এই সরকারদুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সেজন্য এভাবে কাজ করছে।

১৭টি মন্ত্রকের৮৪টি প্রকল্পকে আমরা প্রত্যক্ষ সুফল হস্তান্তর আধার প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করে ৩২কোটি মানুষকে ১ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর প্রকল্পে নিয়েএসেছি। ফলে অনেক লুট বন্ধ হয়ে গেছে। লুন্ঠনকারীরা তো আর চুপ করে বসে থাকবে না।তাদের প্ররোচনায় অনেক রাজনৈতিক দল ঝড় তুলেছে। সেজন্য আমি গোয়াতে বক্তব্য রাখতেগিয়ে বলেছিলাম, এই ঝড় উঠবে আমি জানি। এই বড়লোকদের কষ্টের কথা আমি জানি। সেজন্যতাঁরা কেউ আমাকে ছেড়ে কথা বলবেন না – আমি জানি। আমি আপনাদের মুখোমুখী হতেপ্রস্তুত। দেশের জন্য কাজ করে আমি যে কোনও পরিণামের সম্মুখীন হতে প্রস্তুত। পহলপ্রকল্পের মাধ্যমে আমরা গ্যাস সিলিন্ডারে ভর্তুকিকে আধার-এর সঙ্গে যুক্ত করেবার্ষিক ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি দুর্নীতি বন্ধ করতে পেরেছি। পরিণামস্বরূপ আমরাদেড় কোটি গরিব পরিবারকে গ্যাস কানেকশন দেওয়ার সাফল্য পেয়েছি। আপনারা খোঁজ নিয়েদেখবেন। সংসদে বক্তব্য রাখার সময় আমি দায়িত্ব নিয়ে কথা বলি। তেমনই গত আড়াই বছরেদেশে কয়েক কোটি ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্যে আধারেরসঙ্গে রেশন কার্ড যুক্ত করায় ৩ কোটি ৯৫ লক্ষেরও বেশি প্রায় ৪ কোটি রেশন কার্ডবাতিল হয়েছে। ফলে, দালালদের প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে! এই ১৪ হাজারকোটি টাকা গরিব মানুষের উন্নয়নের কাজে লাগবে।

এমজিএনআরইজিএ-এরটাকা আধার-এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ হস্তান্তর করে আমরা ইতিমধ্যেই ৯৪ শতাংশ সাফল্যপেয়েছি। ফলে, ৭ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা সরকারের সাশ্রয় হলে সেই টাকাও উন্ন্যনের খাতেখরচ করা হচ্ছে।

একই প্রক্রিয়ায়ন্যাশনাল অ্যাসিসটিং প্রোগ্রাম-এ আগে যত টাকা অনুদান দেওয়া হতো এ বছর তার থেকে ৪০০কোটি টাকা কম দিতে হয়েছে। এই টাকা নেওয়ার লোক আমরা খুঁজে পাইনি। অনেক ক্ষেত্রে ধরাপড়েছে, যে মেয়ের জন্মই হয়নি সে বিধবা হয়েছে বলে রাজকোষ থেকে আর্থিক অনুদান যেত।বৃত্তির ক্ষেত্রেও আমরা এমনই ৪৯৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি। অর্থাৎ, বছরে প্রায় ৫০হাজার কোটি টাকার ভুয়ো বৃত্তির টাকা দালালরা হরণ করত। এ ধরনের লুঠ বন্ধ করতেহিম্মত চাই।

মাননীয়অধ্যক্ষমহোদয়া, কৃষকপ্রেমী বন্ধুদের একটি উদাহরণ দিতে চাই। প্রতি বছরপ্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের থেকে চিঠি পেতেন আরও বেশি ইউরিয়ার যোগানের জন্য।প্রতি বছর দেশের নানা প্রান্তে ইউরিয়া নিয়ে হাহাকার, হাঙ্গামা, লাঠিচার্জের খবরআসতো। কিন্তু গত দু’বছরে কোনও মুখ্যমন্ত্রী আমাকে ইউরিয়া চেয়ে চিঠি দেননি। কোথাওহাহাকার লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটেনি। আমরা ইউরিয়ায় নিম কোটিং ব্যবহার শুরু করেএক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে পেরেছি। চোরাপথে আর রাসায়নিক কারখানাগুলিতেভর্তুকিপ্রাপ্ত ইউরিয়া চলে যাচ্ছে না। অথচ, ২০০৭-এর অক্টোবর আপনাদেরই গ্রুপ অফমিনিস্টারস্‌ এই নিম কোটিং-এর প্রস্তাব প্রিন্সিপালি অ্যাপ্রুভ করেন। তারপর কীহয়েছিল? প্রায় ছয় বছর একে চেপে রেখে দিলেন। আপনারাই এতে ক্যাপ লাগালেন ৩৫ শতাংশ,এর বেশি ইউরিয়া নিম কোটিং করা যাবে না। কেন? ১০০ শতাংশ করে দিলে চোরাই পথে ইউরিয়ারাসায়নিক কারখানাগুলিতে কেমন করে যাবে, ইউরিয়া মিশিয়ে কালো বাজারিরা সিন্থেটিক দুধবানিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে কেমন করে ছিনিমিনি খেলবে? সেজন্য আপনারা ৩৫ শতাংশইউরিয়া নিম কোটিং-এ রাজি হলেও বাস্তবে ২০ শতাংশ নিম কোটিং ইউরিয়া উৎপন্ন হতো। আমরাশাসনক্ষমতায় এসে ৬ মাসের মধ্যেই ১০০ শতাংশ নিম কোটিং ইউরিয়া উৎপাদন সুনিশ্চিত করি।১৮৮টি দেশ থেকে আমদানিকৃত ইউরিয়াকেও ১০০ শতাংশ নিম কোটিং করে কালো বাজারি বন্ধ করেদিই। এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন সেন্টার এই প্রক্রিয়ারঅ্যানালিসিস করে রিপোর্ট দিয়েছে তা অনুযায়ী গত দু’বছরে ৫ শতাংশ ঋণ উৎপাদন বেড়েছে,১৫ শতাংশ আখ উৎপাদন বেড়েছে। কল্পনা করতে পারেন, কৃষকদের কত টাকা সাশ্রয় হয়েছে!

শ্রদ্ধেয়রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লোকসভা এবং সকল রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনযদি একসঙ্গে করা যায়, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সকলেরই কোথাও না কোথাও লোকসান হবেকিন্তু দেশের অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। এ নিয়ে সবাই গভীর চিন্তাভাবনা করে দেখুন। এখনপ্রতি বছর ৫-৭টি রাজ্যে নির্বাচন দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে সবচাইতে বেশিক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষা ক্ষেত্র। শিক্ষক, অধ্যাপকরা নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত থাকলে,স্কুলগুলিতে নির্বাচন কেন্দ্র, পুলিশ ও অসামরিক বাহিনীর আবাস হলে ভবিষ্যৎপ্রজন্মের অনেক ক্ষতি হয়। আর খরচও দিন দিন বাড়ছে। ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে ১১০০কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। ২০১৪য় তা বেড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় হয়। কল্পনাকরুন, গরিব দেশকে কতটা আর্থিক বোঝা বইতে হয়! আজকাল আইন ব্যবস্থা নানা নতুন নতুনচ্যালেঞ্জের মুখোমুখী। প্রাকৃতিক সংকটে নিরাপত্তা বাহিনীগুলির সাহায্য নিতে হয়,বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া সন্তাসবাদ আর আমাদের শত্রুদের নানা ছাল থেকে দেশকে রক্ষা করতেনিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করতে হয়। অন্যদিকে, নির্বাচনের সময়ও নিরাপত্তা বাহিনীরজওয়ানদের প্রতি বছর দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছুটে যেতে হয়। এসব সমস্যারকথা মাথায় রেখে দূরদৃষ্টির প্রয়োগ করুন। একসঙ্গে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত সরকার নিতেপারে না। দায়িত্বশীল অভিজ্ঞতা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা ভাবুন, এই সমস্যারসমাধান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে! এভাবেই আমরা শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতিকে ধন্যবাদজানিয়ে তাঁর আবেদনকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারব।

মাননীয় অধ্যক্ষমহোদয়া, আমাদের দেশের গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থাকে মজবুত না করলে দেশের অর্থব্যবস্থাকে বেশি দূর এগোনো যাবে না। আমি অবাক হয়ে শুনলাম, বিপক্ষ দলের নেতারাষ্ট্রপতি মহোদয়ের সম্বোধনে দলিত, পীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত নবীন শ্রমিক শব্দগুলিশুনে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁর মানে কি এই দাঁড়ায় যে রাষ্ট্রপতির ভাষণে এদেরকথা থাকা উচিৎ নয়?

আমরা কৃষিসিঞ্চাই যোজনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি, কারণ এমজিএনআরইজিএ-তে বুনিয়াদী পরিবর্তনএসেছে। আমরা দু’বছরে ১১ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। এক্ষেত্রেও আমরামহাকাশ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এর মধ্যে জিরো টেকিং ব্যবস্থা গড়ে তুলে সুফলপেয়েছি। প্রতিটি পুকুরের দিকে নজর রাখা হয়েছে, যাতে সেচ ছাড়াও মৎস্যচাষে উন্নতিকরা যায়। সারা দেশে মোট ১০ লক্ষেরও বেশি নতুন পুকুরে খননের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জিরোটেকিং-এর ফলে তদারকি ব্যবস্থা প্রায় নিঃছিদ্র হওয়ায় এক্ষেত্রেও দুর্নীতি রদ করাসম্ভব হচ্ছে। আমাদের সাধারণ মানুষের টাকায় পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহে এ ধরনের অসংখ্যসুবিধা রয়েছে, যা ব্যবহার করলে আপনারাও অনেক সাশ্রয় করতে পারবেন। এখন আমরা চেষ্টাকরছি। আমাদের করতে দিন।

প্রধানমন্ত্রীফসল বিমা যোজনা জনপ্রিয় হয়েছে। ফসল বিমা আগেও ছিল কিন্তু নানা কারণে কৃষকরা এতেআগ্রহী ছিল না। ঐ বিমা কৃষকদের জন্য সুবিধাজনক ছিল না। আমরা যারা রাজনৈতিক নেতা,রাজনীতি ছাড়াও আমাদের সমাজের প্রতি দায়িত্ব রয়েছে। সেজন্য আপনাদের সবাইকে অনুরোধকরব প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা সম্পএর্কে ভালভাবে জানুন, আর যদি মনে হয় এই বিমাআপনার এলাকার কৃষকদের উপকারে লাগবে, তা হলে তাঁদেরকে বুঝিয়ে বিমা করান। এতেআপনাদেরই জনপ্রিয়তা বাড়বে। এক্ষেত্রে এমনকি প্রথমবার বীজ বোনার সময়েও যদি কোনওপ্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে কৃষক সেই বিমার অর্থ পাবেন, আবার ফসল কাটার পর ১৫ দিনেরমধ্যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে বিমারঅর্থ পাবেন।

আমাদের সঙ্গেমতভেদ থাকলেও মৃত্তিকা স্বাস্থ্য কার্ড-এর উপকারিতা নিয়ে আপনাদের কারও মনে নিশ্চয়ইকোনও সন্দেহ নেই। আপনারা নিজের এলাকার কৃষকদের এই কার্ড নিতে উৎসাহ যোগান,রাজনীতির উর্ধ্বে বিজ্ঞানকে স্থান দিন। এতে গ্রামীণ এলাকাতেও নতুন নতুন প্রাইভেটল্যাব গড়ে উঠবে। গ্রামের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।

মাননীয় অধ্যক্ষমহোদয়া, আমরা মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে ২ কোটিরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে বিনাগ্যারান্টিতে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যাতে তাঁরা তাঁদের ব্যবসা বাড়াতেপারেন, কর্মচারী নিয়োগ করতে পারেন, আমরা দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিয়েছি, যাতে আরও অনেকস্বল্প শিক্ষিত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। নতুন নতুন স্ব-উদ্যোগীরাতাঁদের ব্যবসা শুরু করতে পারেন, শিল্প স্থাপন করতে পারেন। আমরা উর্জা গঙ্গা যোজনারমাধ্যমে পূর্ব ভারতকে গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে যুক্ত করার অভিযান শুরু করেছি।হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপ লাইন বসানো হবে। এক্ষেত্রেও অনেক নতুনকর্মসংস্থান হবে।

বস্ত্র এবংজুতো নির্মাণের ক্ষেত্রেও আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এক্ষেত্রেও অনেক নতুনকর্মসংস্থানের সম্ভাবনা গড়ে উঠেছে।

‘জিরো ডিফেক্টজিরো এফেক্ট’ হোক আমাদের উৎপাদনের মাপকাঠি। তবেই আমরা বিশ্ব বাজার দখল করতে পারব।আমাদের ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পপতিরাও তাঁদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে পারবেন।ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দুনিয়ায় তাঁরা মিরাকেল দেখাতে পারবেন। সেজন্য এবারের বাজেটে ৯৬শতাংশ শিল্পপতি লাভবান হবেন। ৪ শতাংশ বৃহৎ শিল্পপতিদের কথা আমরা ভাবতে পারিনি।

সার্জিকালস্ট্রাইক-এর পর প্রথম ২৪ ঘন্টা বিরোধিদের অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে কেমন ভাষা প্রয়োগকরেছিলেন, তারপর অবশ্য দেশবাসীর মেজাজ দেখে আপনারা ভাষা বদলেছেন। ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েকেউ আর প্রশ্ন তোলেননি।

কিন্তু নোট বাতিল নিয়ে, বিমুদ্রাকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মোদীজি এইসিদ্ধান্তকে গোপন রেখেছিলেন কেন? ক্যাবিনেটেও কেন জানাননি?

ভাই ও বোনেরা,আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর বীরত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাঁদের অদম্য সাহস ওশৌর্যকে ভরসা করি বলেই এই সার্জিকাল স্ট্রাইকের গোপন সিদ্ধান্ত। সেনাবাহিনী সফলঅভিযান চালিয়ে আমার আস্থার মর্যাদা রেখেছেন। এখন এই সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে কারওকোনও সমস্যা থাকলেও আর মুখ ফুটে বলবেন না জানি। তা হলে আপনাদের চিহ্নিত হয়ে যাওয়ারভয় আছে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, আমাদের সেনা এই দেশের নিরাপত্তা রক্ষার সামর্থ্যরাখে – যথেষ্ট শক্তিশালী।

শ্রদ্ধেয়অধ্যক্ষ মহোদয়া, আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, আমরা এই সংসদে নির্ভয়ে আলাপ-আলোচনা, গবেষণালব্ধনানা আবিষ্কারের কথা, শুনবো, আমরা দেশের জ্ঞান পূজারীদের স্বাগত জানাব, তাঁদের কথাশুনে আমরা স্তব্ধ হব, দেশবাসী উপকৃত হবেন। সরকার পক্ষ কিংবা বিরোধী পক্ষের যে কারওনতুন ভাবনার কথা যা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে, দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে –এমন পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই। তাঁদের কথা শুনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতেচাই। আজ গোটা বিশ্ব ভারতের দিকে তাকিয়ে। এমন সুযোগ সবসময় আসে না। আসুন আমরা সকলেরাজনীতির উর্ধ্বে উঠে সমস্বরে দেশের শক্তি বৃদ্ধি করি আর দেশের উন্নয়নকে নতুনউচ্চতা প্রদান করি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমাদের পূর্বজরা যে স্বপ্ন দেখে গেছেন আমরাসেগুলি সাকার করতে পারবো।

মাননীয় অধ্যক্ষমহোদয়া, আমাকে দিয়েছেন, সংসদে উপস্থিত সকল মাননীয় সদস্যরা আমার কথা শুনেছেন,সেজন্য আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। মানানীয় রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে অন্তর থেকেঅভিনন্দন জানিয়ে আমার বক্তব্যকে বিরাম দিচ্ছি, অনেক অনেক ধন্যবাদ।