Research in agro-biodiversity is vital to ensure global food, nutrition and environment security: PM
India holds a unique place due to its geo diversity, topography and climatic zones: PM
Ours is agriculture based society: PM Modi
Keeping our natural resources intact and conserving them is at the core of our philosophy: PM
Every country must learn from other countries for strengthening research in agro-biodiversity: PM

মঞ্চে উপস্থিতশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ,

দেবীগণ ও ভদ্রমহোদয়গণ,

আজ এখানে কৃষি-জৈববৈচিত্র্য ক্ষেত্রে গবেষণারত বড় বড় বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাবিদ, নীতি-নির্ধারক এবংঅসংখ্য কৃষক ভাইদের মাঝে এসে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই অবকাশে আমি বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে আগত প্রতিনিধিদের এই ঐতিহাসিক নগরীতে হার্দিক স্বাগত জানাই। এইগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে এই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মেলনের সূত্রপাতহচ্ছে ভারতে, সেজন্য আমি দ্বিগুণ খুশি হয়েছি।

উন্নয়নের অন্ধপ্রতিযোগিতার ফলে মানুষ প্রকৃতিকে যত শোষণ করেছে, এতটা কেউ করেনি। আর একথা বললেভুল হবে না যে সবেচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে বিগত কয়েক শতাব্দীকালেই।

এহেন পরিস্থিতিতেআগামীদিনে সমস্যা আরও বাড়তে থাকবে। বর্তমান সময়ে বিশ্বময় খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্যএবং পরিবেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষি-জৈব বৈচিত্র্য নিয়ে আলাপ-আলোচনা এবংনিরন্তর গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।

আমাদের ভূ-বৈচিত্র্যএবং নানা প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার কারণে ভারত অনেক জৈব বৈচিত্র্য দেশ।পশ্চিমে বিস্তৃত শুষ্ক মরুভূমি আর উত্তর-পূর্বে বিশ্বের সর্বাধিক আর্দ্রআবহাওয়াসম্পন্ন অরণ্যভূমি রয়েছে। উত্তরে বিশাল উত্তুঙ্গ হিমালয় আর দক্ষিণে অথৈ সমুদ্র।

ভারতে ৪৭ হাজারেরওবেশি উদ্ভিদ প্রজাতি আর ৮৯ হাজারেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি রয়েছে। ভারতে রয়েছে ৮হাজার ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্র সৈকত।

এদেশের অদ্ভুতক্ষমতা হল বিশ্বের কেবল ২.৫ শতাংশ ভূ-ভাগের অধিকারী হয়েও মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ,মোট প্রাণী সংখ্যার ১৮ শতাংশ এবং মোট জৈব বৈচিত্র্যের ৬ শতাংশ ধারণ করছে, সামলেরাখছে।

 

আমাদের ভূ-বৈচিত্র্যএবং নানা প্রকারের ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়ার কারণে ভারত অনেক জৈব বৈচিত্র্য দেশ।পশ্চিমে বিস্তৃত শুষ্ক মরুভূমি আর উত্তর-পূর্বে বিশ্বের সর্বাধিক আর্দ্রআবহাওয়াসম্পন্ন অরণ্যভূমি রয়েছে। উত্তরে বিশাল উত্তুঙ্গ হিমালয় আর দক্ষিণে অথৈ সমুদ্র।

ভারতে ৪৭ হাজারেরওবেশি উদ্ভিদ প্রজাতি আর ৮৯ হাজারেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি রয়েছে। ভারতে রয়েছে ৮হাজার ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি সমুদ্র সৈকত।

এদেশের অদ্ভুতক্ষমতা হল বিশ্বের কেবল ২.৫ শতাংশ ভূ-ভাগের অধিকারী হয়েও মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ,মোট প্রাণী সংখ্যার ১৮ শতাংশ এবং মোট জৈব বৈচিত্র্যের ৬ শতাংশ ধারণ করছে, সামলেরাখছে।

আমাদের দেশের সমাজহাজার হাজার বছর ধরে কৃষি নির্ভর। আজও দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানহয় কৃষি ও কৃষিজ ক্ষেত্র থেকে।

ভারতীয় কৃষি-দর্শনহল প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে অক্ষত রেখে, সেগুলির সুষম সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনমতো সেগুলির ব্যবহার। আজ বিশ্বের সকল অগ্রণী উন্নয়ন প্রকল্প এই দর্শনকে ভিত্তিকরেই গড়ে উঠেছে।

জৈব বৈচিত্র্যেরচালনাশক্তি এই সম্পর্কিত আইন-কানুন নয়, চালনাশক্তি হওয়া উচিৎ আমাদের চেতনাশক্তি।সেজন্য অনেক পুরনো অভ্যাস ভুলতে হবে আর অনেক নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রাকৃতিকচেতনার এই ভারতীয় দর্শন ঈশাবাশ্য উপনিষদে গ্রন্থিত রয়েছে। লেখা রয়েছে, জৈবকেন্দ্রিক পৃথিবীতে মানুষ একটি ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। অর্থাৎ, গাছপালা এবংজীবজন্তুদের গুরুত্ব মানুষের থেকে কোনও অংশে কম নয়।

রাষ্ট্রসংঘেরসহস্রাব্দ উন্নয়ন পরিকল্পনায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেস্বীকার করে নেওয়া হয়েছে । UN 2030 AGENDA FOR SUSTAINABLE DEVELOPMENT -এও নিরন্তর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও সভ্যতার নানাউপকরণের প্রয়োজনীয় ভূমিকাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতিরসঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘এগ্রিকালচার’ শব্দটিরমধ্যে যে ‘কালচার’ শব্দটি অন্তর্নিহিত রয়েছে, তা ভুললে চলবে না।

আমাদেরপূর্বপুরুষদের আর্থ-সামাজিক নীতি কুশলতার ফলেই ভারতে আজও নানা প্রজাতির প্রাণী ওউদ্ভিদের জৈব বৈচিত্র্য বজায় রয়েছে। তারা উৎপাদনকে সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে যুক্তকরে রেখেছিলেন। কপালে যে তিলক লাগানো হবে, তাতেও চালের গুঁড়ো মেশানো থাকতো।সুপারিও পুজোর অর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নবরাত্রি বা যে কোনও ব্রত পালনের সময়কুটু বা বকহুইটের আটা দিয়ে রুটি বা পুরি বানানো হয়। বকহুইট একটি জংলি ফুলের বীজ।অর্থাৎ, উদ্ভিদের প্রজাতিগুলিকে সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে মানুষসেগুলিকে রক্ষা করবে, পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক লাভও হবে।

 

আমাদের দেশের সমাজহাজার হাজার বছর ধরে কৃষি নির্ভর। আজও দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানহয় কৃষি ও কৃষিজ ক্ষেত্র থেকে।

ভারতীয় কৃষি-দর্শনহল প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে অক্ষত রেখে, সেগুলির সুষম সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রয়োজনমতো সেগুলির ব্যবহার। আজ বিশ্বের সকল অগ্রণী উন্নয়ন প্রকল্প এই দর্শনকে ভিত্তিকরেই গড়ে উঠেছে।

জৈব বৈচিত্র্যেরচালনাশক্তি এই সম্পর্কিত আইন-কানুন নয়, চালনাশক্তি হওয়া উচিৎ আমাদের চেতনাশক্তি।সেজন্য অনেক পুরনো অভ্যাস ভুলতে হবে আর অনেক নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রাকৃতিকচেতনার এই ভারতীয় দর্শন ঈশাবাশ্য উপনিষদে গ্রন্থিত রয়েছে। লেখা রয়েছে, জৈবকেন্দ্রিক পৃথিবীতে মানুষ একটি ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। অর্থাৎ, গাছপালা এবংজীবজন্তুদের গুরুত্ব মানুষের থেকে কোনও অংশে কম নয়।

রাষ্ট্রসংঘেরসহস্রাব্দ উন্নয়ন পরিকল্পনায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকেস্বীকার করে নেওয়া হয়েছে । UN 2030 AGENDA FOR SUSTAINABLE DEVELOPMENT -এও নিরন্তর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি ও সভ্যতার নানাউপকরণের প্রয়োজনীয় ভূমিকাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

প্রকৃতিরসঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার সংস্কৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘এগ্রিকালচার’ শব্দটিরমধ্যে যে ‘কালচার’ শব্দটি অন্তর্নিহিত রয়েছে, তা ভুললে চলবে না।

আমাদেরপূর্বপুরুষদের আর্থ-সামাজিক নীতি কুশলতার ফলেই ভারতে আজও নানা প্রজাতির প্রাণী ওউদ্ভিদের জৈব বৈচিত্র্য বজায় রয়েছে। তারা উৎপাদনকে সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে যুক্তকরে রেখেছিলেন। কপালে যে তিলক লাগানো হবে, তাতেও চালের গুঁড়ো মেশানো থাকতো।সুপারিও পুজোর অর্ঘ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নবরাত্রি বা যে কোনও ব্রত পালনের সময়কুটু বা বকহুইটের আটা দিয়ে রুটি বা পুরি বানানো হয়। বকহুইট একটি জংলি ফুলের বীজ।অর্থাৎ, উদ্ভিদের প্রজাতিগুলিকে সামাজিক সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত করে দিলে মানুষসেগুলিকে রক্ষা করবে, পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক লাভও হবে।

বন্ধুগণ,এইসব বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। সেজন্য ১৯৯২ সালে জীব বিজ্ঞান – বৈচিত্র্যসংযোগ নিয়ে প্রস্তাবগুলিকে স্বীকার করে নেওয়ার পর আজও প্রতিদিন ৫০-১৫০টি প্রজাতিপৃথিবী থেকে লোপ পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীদিনে ৮ ভাগের ১ ভাগ প্রজাতির পাখিএবং ৪ ভাগের ১ ভাগ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেজন্যআজ ভাবনার পদ্ধতি বদল করতে হবে। যেগুলি টিকে রয়েছে, সেগুলি রক্ষা করার পাশাপাশিতাদের সংখ্যাবৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে। যেক্ষেত্রে যেদেশ সাফল্য পেয়েছে, তাদেরথেকে অন্যদের শিখতে হবে। কৃষি জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য নিরন্তর গবে ষণায় জোর দিলে তবেই এটা করা সম্ভব।কৃষি-জৈব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আলাদা-আলাদা পদ্ধতিতে কাজকরে। এর মধ্যে কোন্‌ পদ্ধতি কোন্‌ ক্ষেত্রে কতটা সুলভে সর্বাধিক সুফলদায়ী হয়, সেব্যাপারে নিয়মিত মতবিনিময়ের মাধ্যমে সুসংহত পদ্ধতি গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। এইপদ্ধতিগুলির রেজিস্ট্রি গড়ে তোলা যায় কি না, যেখানে এই পদ্ধতিগুলির মানচিত্রনথিভুক্ত করা থাকবে এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে কোন্‌পদ্ধতিগুলিকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আমাদের সংস্কৃতি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নানা প্রজাতিকেবাঁচিয়ে রেখেছে। দক্ষিণ ভারতে একটি প্রাচীন প্রজাতির ধান চাষ হয় – ‘কোনামমি’।বর্তমানে বৈজ্ঞানিকরা সারা পৃথিবীতে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ক্ষেত্রে এইধানটিকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে। একই রকমভাবে কেরলের পোক্কালী প্রজাতির ধানকেসারা পৃথিবীতে যেখানে অধিক জল থাকে কিংবা লবণাক্ত জল থাকে, সেসব এলাকায় চাষের জন্যব্যবহার করা হয়।

আমি বিদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের বিশেষ করে বলতে চাইব,ভারতে ১ লক্ষেরও বেশি ধানের প্রজাতি রয়েছে। এগুলির মধ্যে অধিকাংশই কয়েক শতাব্দী বাসহস্রাব্দ পুরনো প্রজন্মের। বংশানুক্রমে আমাদের এই প্রজাতিগুলিকে সংরক্ষণ করেছেএবং সেগুলিকে বিকশিত করেছে।

সকল ক্ষেত্রে এই সংরক্ষণ নির্দিষ্ট এলাকা-ভিত্তিক হয়নি।আসামে অগুনিবোরা প্রজাতির ধান কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখলেই খাওয়া যায়। এভাবে ঐ চালখেলে ডায়াবেটিস রোগীরা উপকৃত হন। কারণ, এতে গ্লাইসিমিক ইনডেক্স খুবই কম থাকে।গুজারটের ভাল এলাকায় উৎপাদিত গমের একটি প্রজাতি রয়েছে, যার নাম ভালিয়া। এতে অত্যধিকপরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যারোটিন থাকে, ডালিয়া ও পাস্তার জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।গমের এই বৈচিত্র্যটিকে জিওগ্র্যাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন রূপে রেজিস্টার করা হয়েছে।

অন্যান্য দেশেও কৃষি-জৈব বৈচিত্র্যে ভারতের অবদানস্বীকার করে নিয়েছে।

হরিয়ানা মুররাহ্‌ আর গুজরাটের জফরাবাদী মহিষের পরিচয়আন্তর্জাতিক ট্র্যান্স বাউন্ডারি ব্রিড হিসেবে পরিগণিত। একই রকমভাবে ভারতেরওঙ্গোল, গির এবং কাঁকরেজ প্রজাতির গরু লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে প্রজননসংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন থেকেগ্যায়রল প্রজাতির ভেড়া প্রজনন সংস্কারের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।

প্রাণী-জৈব বৈচিত্র্যে ভারত অত্যন্ত সমৃদ্ধ দেশ। কিন্তুভারতে নন-ডেসক্রিপ্ট প্রজাতির সংখ্যা বেশি। এগুলি মধ্যে কেবল ১৬টি প্রজাতিকেনথিভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আমি এদিকে বৈজ্ঞানিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যাতেআরও বেশি করে অনথিভুক্ত প্রাণী প্রজাতির চরিত্র বিশ্লেষণ করে তাদেরকে যথাযথপ্রজাতি রূপে নথিভুক্ত করা যায়।

 

দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রেপ্রযুক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির কুপ্রভাব কি হতে পারে, সেদিকটাওভেবে দেখতে হবে। এখানে যাঁরা রয়েছেন, প্রত্যেকেই আমার সঙ্গে সহমত হবেন যে, কয়েকবছর আগেও আমরা আত্মীয়-পরিজনদের ১৫-২০টি ফোন নম্বর মুখস্থ রাখতে পারতাম। এখন মোবাইল ফোন আসার পর আমরা এখনঅনেক সময় নিজের ফোন নম্বরও মনে রাখতে পারি না, এটাকে আমি প্রযুক্তির কু-প্রভাবইবলব।

কৃষি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য প্রযুক্তিতে কি ধরনের পরিবর্তনআসছে, সে সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আমি মৌমাছির কথা বলব। বছরতিনেক আগে টাইম ম্যাগাজিন মৌমাছিকে কভার স্টোরি করেছিল। সেখানে পড়েছিলাম যে, ফসলকেপোকার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা যে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করি, সেগুলিরপ্রভাবে মৌমাছিরা নিজেদের মৌচাকে যাওয়ার পথ ভুলে যায়, ফলে তাদের অস্তিত্বের সঙ্কটদেখা দেয়। পরাগমিলনের ক্ষেত্রে মৌমাছির ভূমিকা আমরা সকলেই জানি। ফলে, ফসলেরউৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষি বাস্তুতন্ত্রে কীটনাশক আজ দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেদাঁড়িয়েছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসলের পক্ষে ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের পাশাপাশিউপকারি কীটপতঙ্গেরও মৃত্যু ঘটছে। এই ঘটনা গোটা বাস্তুতন্ত্রকেই বিপর্যস্ত করেতুলছে। সেজন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণারও নিয়মিত অডিট হওয়া প্রয়োজন। বৈজ্ঞানিক গবেষণারক্ষেত্রে কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে, আজ সভ্যতাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতেহচ্ছে।

আমাদের দেশে জৈব বৈচিত্র্যের ভিন্নতাকে শক্তি হিসেবেগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু সেটা তখনই সম্ভব, যখন সেই শক্তির মূল্য সংযোজন করা হবে আরতার জন্য প্রয়োজন যথযথ গবেষণা। যেমন – গুজরাটে ‘বন্নী’ নামক একটি অত্যন্ত পুষ্টিকরঘাস রয়েছে। এই ঘাস খেয়ে গুজরাটের মহিষরা অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি দুধদেয়। এই ঘাসের বৈশিষ্ট্যকে আলাদা করে নিয়ে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে সারা দেশে এই ঘাসউৎপাদন করা যায় কি না, তা গবেষণা করে দেখতে হবে। এরকম নানা বিষয়ে গবেষণার পরিধিবাড়াতে হবে।

আমাদের দেশের ৭০ শতাংশ সীমান্ত সাগর পরিবেষ্টিত। সমগ্রবিশ্বে যত প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়, তার ১০ শতাংশ ভারতে পাওয়া যায়। সমুদ্রের এই শক্তিকে আমরা কেবলই মৎস্য উৎপাদনের উৎসহিসেবে দেখলে চলবে না, বৈজ্ঞানিকদের নানা সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও শৈবাল চাষ বৃদ্ধিরউপায় খুঁজে বের করতে হবে। সমুদ্র শৈবালের ব্যবহার জৈব সার উৎপাদনেও উপযোগী হয় উঠতেপারে। সবুজ বিপ্লব এবং শ্বেত বিপ্লবের পর এখন আমাদের নীল বিপ্লবকে সামগ্রিকদৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

আপনাদেরআরেকটি উদাহরণ দিই। হিমাচল প্রদেশে মাশরুমের একটি প্রজাতি রয়েছে – গুচ্চি। এইমাশরুমের ভেষজ গুণ এত বেশি যে এটি ১৫ হাজার টাকা কিলো দরে বিক্রি হয়। আমরা কিগুচ্চির উৎপাদন বাড়ানো যায়, সেই গবেষণা করতে পারি? তেমনই ক্যাস্টর কিংবা বাজরারউৎপাদন কিভাবে বাড়ানো যায়, প্রয়োজন অনুসারে এসব ক্ষেত্র মূল্য সংযোজনেরও প্রয়োজনরয়েছে।

 

কিন্তু,এই কাজ খুব সূক্ষ্ণভাবে করতে হবে। মূল্য সংযোজন করার মানে পারিপার্শ্বিক অন্যান্যপ্রজাতিকে বিপর্যস্ত করা নয় ।

প্রকৃতিরনিজস্ব প্রক্রিয়াকে নানাভাবে বিব্রত করেই মানুষ আবহাওয়া পরিবর্তনের মতো গুরুতরসমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীদের জীবনচক্রেপরিবর্তন আসছে। একটি অনুমান অনুসারে এই আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আগামী ২০৫০ সালেরমধ্যেই বিশ্বের সামগ্রিক আরণ্য প্রজাতিসমূহের ১৬ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। এটিঅত্যন্ত দুশ্চিন্তার বিষয়।

বিশ্বউষ্ণায়নের ফলে এই বিপদের কথা অনুভব করে ভারত গত ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীরজন্মজয়ন্তীতে প্যারিস চুক্তিকে সমর্থন করেছে। এই চুক্তিকে সারা পৃথিবীতে প্রয়োগেরক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রকৃতির প্রতি নিজেদের দায়িত্ব ওকর্তব্যের কথা মাথায় রেখেই ভারত এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

সারাপৃথিবীর সকল দেশকেই কৃষি-জৈব বৈচিত্র্যের যথাযথ ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দিতেহবে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং উন্ন্যনের অন্ধ প্রতিযোগিতার ফলে অধিকাংশক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য অনেকাংশে আধুনিক কৃষিতে হাতেগোনা কিছু ফসলের প্রজাতি আর ওষুধের গুরুত্ব প্রদানও দায়ী। পরিবেশের নিরাপত্তারপাশাপাশি কৃষির উন্নয়নসাধনই ছিল আমাদের খাদ্য সুরক্ষার মূল চাবিকাঠি।

জৈববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে আমাদের প্রত্যেকের চারপাশের পরিবেশ রক্ষার সমস্যাগুলিরসম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য জিন ব্যাঙ্কগুলিতেকোনও নির্দিষ্ট জিনের সংরক্ষণের পাশাপাশি সেগুলি যাতে কৃষকরা ব্যবহার করতে পারেন,সেদিকটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, ব্যবহারিকভাবে আমাদের মাটিতে যেসব জিনের ফলনহবে, পরিবেশের চাপ সহ্য করবে, তবেই সেই জিন আশ-পাশের প্রকৃতির অনুকূল প্রতিরোধীক্ষমতা নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে পারবে।

যেসবকৃষকরা বৈজ্ঞানিকদের ইচ্ছে মতো জিনের মূল্যাঙ্কনের জন্য নিজের ক্ষেতে চাষ করবেন,তাঁদেরকে অতিরিক্ত মূল্য প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাঁরা গর্বের সঙ্গেআমাদের গবেষণার সহযোগী হয়ে ওঠেন।

জৈববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং বেসরকারি সংগঠনগুলিরপারদর্শিতা, প্রযুক্তি এবং বিশেষজ্ঞদের সম্মিলিত প্রয়াসে সাফল্যের সম্ভাবনানিশ্চিত রূপেই বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য আমাদের সহযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তারয়েছে।

কৃষি-জৈববৈচিত্র্যের সংরক্ষণে নানা আইনগুলিকে কিভাবে সংহত করা যায়, তা দেখতে হবে, যাতে এইআইন বিকাশশীল দেশগুলির কৃষি ও কৃষকদের উন্নয়নের প্রতিকূল না হয়ে ওঠে।

আপনারাসকলেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। আশাকরি, আপনাদের সম্মিলিত যোগদানে আগামী তিন দিনকৃষি-জৈব বৈচিত্র্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর আলোচনা সুফলদায়ক হবে।

আজবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার। এই সমস্যাগুলিরসমাধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এই সমস্যাগুলিরসমাধানসূত্র যাতে সুদূরপ্রসারী উন্নয়নকে সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি জৈব বৈচিত্র্যেরসংরক্ষণেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বন্ধুগণ,আমরা যাতে আমাদের কৃষি-জৈব বৈচিত্র্যকে আগামী প্রজন্মের হাতে অক্ষতভাবে তুলে দিয়েযেতে পারি – একথা মাথায় রেখেই আমাদের প্রাকৃতিক উপাদানগুলির সংরক্ষণের কথা ভাবতেহবে। আমাদের পূর্বজরা আমাদেরকে যেমন পৃথিবীতে রেখে গেছেন, আমরা যেন তেমনই সুন্দরপৃথিবী রেখে যেতে পারি। সেজন্য আপনাদের সকলকে আরেকবার অন্তর থেকে স্বাগত জানাই।