মাননীয় সুমিত্রামহাজন মহোদয়া এবং উপস্থিত শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিবর্গ,
গতবছর থেকে আমরা ২৬ শে নভেম্বর দিনটিকেসংবিধান দিবস উপলক্ষ্যে উদযাপন শুরু করেছি । আমাদের নতুন প্রজন্মকে ভারতের সংবিধান রচনার প্রক্রিয়াএবং এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করা , দেশের সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যেরসঙ্গে তাদেরকে যুক্ত করার জন্যেই এই আয়োজন কল্পনা করা হয়েছে । যা কিছু হচ্ছে , তা কেমন করে হচ্ছেসে সম্পর্কেও তাঁদের অবহিত করা , এই প্রক্রিয়াযেন নিরন্তর চলতে থাকে। তৎকালীন সময়ের প্রেক্ষিতেই মূল ভাবনাকে বারবার স্মরণ করতেহবে।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে কোনও বিষয়ের যেমানে ছিল তার দশ বছর পর হয়তো ভিন্ন মানেদেখা দিয়েছে, একটি Progressive format হয়, কিন্তু তখনই হয়যখন মূলের সঙ্গে আমরা প্রতিটি জিনিসকে তুলনা করি, পরিমাপ করি। আমাদের স্কুল-কলেজের সকল ছাত্র ছাত্রীদের নিদেনপক্ষে বছরে একবার সংবিধানের প্রস্তাবনা পড়ানোউচিত। পাঠ হবে, ব্যাখ্যা করা হবে, এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে সংবিধানেরমাহাত্ম্য প্রচারিত হবে। অনেক কম দেশের জনজীবনেই সংবিধানের কথা বারবার উল্লেখিতহয়। কিন্তু এদেশে আমরা সংবিধান দিবস উদযাপন করি , আর সংবিধানেরকথা ভাবলেই আমাদের মনে পড়ে ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকরের কথা । বাবাসাহেবের পূণ্যস্মৃতিআর দেশের সংবিধান আমাদের স্মৃতিতে এত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে – এহেন সিদ্ধি কোনব্যক্তির জীবনে প্রায় অসম্ভব । বাবাসাহেব যা বলেননি, এরকম অনেক কিছু আমরা এখনতাঁর জীবন থেকে অনুভব করছি। তাঁর সমকালে কেউ হয়তো এতটা উপলব্ধি করেননি, কিন্তু যতসময় পেরুচ্ছে আমরা সবাই অনুভব করছি তিনি আমাদের জন্যে কত মহান কাজ করে গেছেন!
সময় এত বদলে গেছে যে প্রত্যেকেইসংবিধানে নিজের অধিকার খোঁজেন। চালাক মানুষেরা অনেক সময় সাংবিধানিক অধিকারের অসাধুপ্রয়োগ করে অন্যায়ের সীমা লঙ্ঘন করে। এর ফলে সমাজে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। বাবাসাহেবআম্বেদকর ‘অরাজকতার ব্যাকরণ’ ব্যাখ্যা করেছেন। শাসন ব্যবস্থা, সরকার ও শাসনব্যবস্থার ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের আশা- আকাঙ্ক্ষার ভারসাম্যরক্ষা করে সংবিধান। সংবিধানের Lubrication করার শক্তি রয়েছে,আবার রক্ষা করার শক্তিও রয়েছে। সেজন্যে আমাদের শুধু ধারাগুলির সঙ্গে পরিচিত না হয়েসকলেরই এই সংবিধানের আত্মার সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে । Spirit ofthe Constitution, আর সেজন্যেই আর তার প্রসেসের যে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তা হয়তো Spiritof the Constitution এর জন্যে তার এক একটি পৃষ্ঠা খোলার কাজে লাগবে। আমি এইগ্রন্থটিকে স্বাগত জানাই।
একথা সত্যি যে, কর্তব্যভাবনার উৎকৃষ্টঅভিব্যক্তি থেকেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামকে নিজেদেরকর্তব্য বলে ভাবতেন। শতাব্দীকালের থেকেও বেশি সময় ধরে নিজেদের কর্তব্যভাবনাকেতাঁরা অতুলনীয় উচ্চতায় পৌঁছে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনহওয়ার অব্যবহিত পরেই এই উচ্চতা থেকে দেশবাসী এত দ্রুত নীচে নেমে যায় যে সকলকর্তব্যভাবনা অধিকারভাবনায় রূপান্তরিত হয়ে পরে।
এখন দেশের সামনে সবচাইতে বড় সমস্যা এইঅধিকার আর কর্তব্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। আমরা এই ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে এইভারসাম্য রক্ষার রাস্তা খুঁজছি। আমরা অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ২৬শে জানুয়ারি উদযাপন করি । কিন্তু এই ২৬শেনভেম্বর ছাড়া ২৬শে জানুয়ারি যে অসম্পূর্ণ সেটা যেন আমরা না ভুলি ! ২৬শেজানুয়ারির শক্তি ২৬শেনভেম্বরে নিহিত রয়েছে। সেজন্যেই ২৬শে নভেম্বর দিনটিকে সংবিধান দিবসউপলক্ষ্যে বিশেষ স্মরণের মাধ্যমে আমাদের নতুন প্রজন্ম যাতে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবেসংবিধান সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে নানা কার্যক্রম শুরু করা উচিত । ছাত্রছাত্রীদের জন্যে অনলাইন প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা ইত্যাদির মাধ্যমেতাদেরকে যুক্ত করা যেতে পারে। এখন দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ দুর্নীতি ও কালোটাকার বিরুদ্ধে বড় লড়াইয়ে সিপাহীর ভূমিকা পালন করছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যেস্বাধীনতার পর দীর্ঘ সাত দশক ধরে আইনকানুনের অপপ্রয়োগকারীরা দেশকে দুর্নীতির সাগরেডুবিয়ে দিয়েছে। সংবিধান এবং আইনকানুনের অপপ্রয়োগ করেছে। এই দুর্নীতি ও কালো টাকারবিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের অধিকাংশ মানুষ তাকে সমর্থনজানিয়েছেন। যারা সমালোচনা করছেন তাঁদের মূল বক্তব্য হল, সরকার যথেষ্ট প্রস্তুতি নানিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আমি মনে করি , সরকারের যথেষ্টপ্রস্তুতি নেওয়ার থেকেও তাঁদের আসল কষ্টের জায়গাটা হল সরকার কাউকে যথেষ্ট প্রস্তুতিনেওয়ার সুযোগ দেয়নি । তাঁরা যদি ৭২ ঘণ্টাও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেতেনতাহলে আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতেন । বলতেন, মোদীর মতো লোক হয় না, এত বড় পদক্ষেপ!সেজন্যে, এত বড় দেশ, দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বার্থে এত বড় পদক্ষেপের ফলে সাধারণমানুষের যে ধরণের কষ্ট হচ্ছে, যারা দেশের ভাল চান, আসুন, সবাই মিলে মানুষের কষ্টদূর করার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এই মহাযজ্ঞে সফল হয়ে ভারতকে শক্তিশালী দেশ হিসেবেতুলে ধরি। বিশ্বজুড়ে আয়োজিত নানা সমীক্ষায় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলির তালিকায় ভারতেরস্থান উপরের দিকে রয়েছে। এটা ভারতবাসীর পক্ষে অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। সেই লজ্জা থেকেদেশকে বাঁচাতে, দেশের সাধারণ মানুষের মাথা গর্বে উন্নত করতে এ ধরণের কঠিন পদক্ষেপনেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে কাজ করলেই আমরা দ্রুত দুর্নীতিমুক্তহওয়ার পথে সিদ্ধিলাভ করবো। আমি সকল রাজনৈতিক দলকে, সামাজিক সংস্থাগুলিকে, সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ করবো, আপনারা সাধারণ মানুষকে ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে লেনদেনেউৎসাহী করুন। তাঁদের সাহায্য করুন। হাতে টাকা নিয়েই লেনদেন করা জরুরি নয়। যতটাসম্ভব ডিজিটাল কারেন্সির মাধ্যমে লেনদেনে অভ্যস্ত করে তুলুন আমাদের আপামরজনসাধারণকে। আপনারা নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই সব ধরণের লেনদেন করতে পারেন।আপনার কষ্টোপার্জিত প্রত্যেক পয়সায় আপনার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আমাদের সংবিধানওএই ব্যবস্থার সপক্ষে কথা বলে।
আমি দেশবাসীকে, বিশেষ করে সমাজকেনেতৃত্ব প্রদানকারী প্রত্যেক মানুষ ও সংবাদ মাধ্যমের বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলছি, যেদেশের জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মানুষের বয়স ৩৫বছরের কম, যে দেশের মানুষের কাছে ১০০কোটির বেশি মোবাইল ফোন রয়েছে, যে দেশে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যবসা চালানোর সুবিধারয়েছে, সকল ব্যাঙ্কের নিজস্ব অ্যাপ রয়েছে – তাহলে আমরা কেন সাধারণ মানুষকে মোবাইলফোনকে ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করার প্রেরণা জোগাবো না? সাধারণ মানুষকে প্রশিক্ষিতকরা কোনও কঠিন কাজ নয়। আমরা হোয়াটস আপ শিখতে কোথায় গিয়েছি? এজন্যে কি আমাদের কোনওইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কিম্বা আইটি কলেজে যেতে হয়েছে? নিরক্ষর ব্যক্তিও আজ কত ভালভাবেহোয়াটস আপ দেখতে পারে, মেসেজ ফরোয়ার্ড করতে পারে! যত সহজভাবে হোয়াটস আপ মেসেজ ফরোয়ার্ড করা যায় , ততটাই সহজভাবেআমরা নিজেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে শপিং – ও করা যায় ! দেশের উজ্জ্বলভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার প্রয়োজন রয়েছে । ডিজিটাল কারেন্সিরব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে । ভারতের ৫০০টি শহর চাইলে এক সপ্তাহের মধ্যে এই কাজকরতে পারে । আপনারাশুনলে অবাক হবেন , ৮ নভেম্বরের ঘোষণার ফলে সবচাইতে বেশি লাভবান হয়েছেঅনেক পৌরসভা ও পুর কর্পোরেশন । আমাকে বলা হয়েছে , প্রায় ৪০ – ৫০টি পৌরসভায়গতবছর এই সময়ে তিন – সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কর জমা পড়তো , ৮ নভেম্বরের ঘোষণারপর ইতিমধ্যেই ঐ পৌরসভাগুলির কোষাগারে ১৩ হাজার কোটি টাকা জমা পড়েছে । এই টাকা কাদেরউপকারে লাগবে ? ঐশহরগুলির গরিব বস্তিগুলিতে কোথাও রাস্তা তৈরি হবে , কোথাও বিদ্যুৎসংযোগ হবে , কোথাওজলের কল লাগানো হবে । বুঝতেই পারছেন যে শহরগুলির নাগরিক জীবনে বিপ্লব আনার লক্ষ্যে আমরাকাজ করছি । ভারতেরসংবিধান আমাদের এমনি রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে দেশের নাগরিকদের স্বার্থে অনেক কাজ করারপ্রেরণা জোগায় । সংবিধানআমাদের ঐতিহ্যসমূহের সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করে। এতে লেখা রয়েছে যে, আমাদের মহানঐতিহ্যসমূহের সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদেরই ।
আসুন আমরা সবাই মিলে বাবাসাহেব আম্বেডকরেরনেতৃত্বে রচিত এই মহান সৃষ্টির শব্দগুলি আর ভাবসমূহ আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে , সময়ানুকূল সন্দর্ভেহৃদয়ঙ্গম করে শিখি , বাঁচা শিখি , বেঁচে দেখাই আরদেশকে প্রত্যেক মুহূর্তে নতুন শক্তি , নতুন জ্বালানী আহরণ করি ।
আমি সুমিত্রাজিকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই । এবার ২৬শে নভেম্বরসংসদের অধিবেশন ছিল না , ছুটির দিন ছিল । তবু তিনি এই সংবিধানদিবসের মাহাত্ম্যের কথা ভেবে এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন । ধীরে ধীরে এটিএকটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে পালনের জনপ্রিয়তা অর্জন করবে বলে আমার বিশ্বাস।সময়ের অভাবে আমি এরকম সাতসকালে আসতে বাধ্য হয়েছি। আমার সময়ের অভাবের ফলে আজ আপনাদেরওতাড়াতাড়ি আসতে হয়েছে , সেজন্যে আমি দুঃখিত । অনেক অনেক ধন্যবাদ ।