১৯৭৪-এ ছাত্রদেরনবনির্মাণ আন্দোলন কাঁপিয়ে দেয় অশুভ স্হিতাবস্হা ১ মে ১৯৬০-এ গুজরাট রাজ্য গঠনঘিরে প্রারম্ভিক উচ্ছাস ও অপবাদ থিতিয়ে যায় সেই দশকের শেষ দিকে। দ্রুত সংস্কার ওপ্রগতির স্বপ্ন ভেঙে গিয়ে দেখা যায় মোহভঙ্গের বেদনা। রাজনীতিতে ক্ষমতা ও অর্থেরলোভ নস্যাৎ করে দেয় ইন্দুলাল যাজ্ঞিক, জীবরাজ মেটা ও বলবন্ত রাই মেটার মত বর্ষীয়ানরাজনীতিকের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে। দু ’ য়ের দশকের শেষভাগ ও সাতের দশকে গোড়ার দিকে গুজরাটে কংগ্রেসসরকারের দুর্নীতি ও কুশাসন ওঠে চরমে। ১৯৭১ যুদ্ধে ভারত হারিয়ে দেয় পাকিস্তানকে এবংগরিবদের হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফের ভোট জিতে নেয় কংগ্রেস। ‘ গরিবি হটাও ’ ক্রমে ক্রমে ‘ গরিব হটাও ’ -এ বদলে যাওয়ায় সেইপ্রতিশ্রুতি আখেরে পরিণতি পায় এক ফাঁকা বুলির। গরিবের দশা হয় আরওখারাপ এবং গুজরাটে ভয়ানক খরা ও চড়া দাম বাড়ার দরুন এই দুর্গতির আর শেষ ছিল না।রাজ্যের সব জায়গায় চোখে পড়ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য লম্বা আকাঁবাঁকা লাইন।একটুও রেহাই পায়নি আম জনতা।

হাল সামলানোর তাগিদছেড়ে, গুজরাটে কংগ্রেস নেতারা মেতে পড়েন জোর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে এবং পরিস্হিতিরপ্রতি তারা ছিলেন পুরোপুরি উদাসীন। এর পরিণতিতে ঘনশ্যাম ওঝা সরকার যায় পড়ে এবংমুখ্যমন্ত্রী পদে বসেন চিমনভাই পটেন। এই সরকারও অবশ্য ছিল একই রকম অকর্মণ্য এবংগুজরাটের মানুষের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বাড়তে থাকে অসন্তোষ। এই অসন্তোষ জনতারক্ষোভ হিসেবে আছড়ে পড়ে ১৯৭৩-র ডিসেম্বর। মর্বি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কিছু পড়ুয়াতাদের খাবারের বিল বেজায় চড়ার বিরুদ্ধে জানায় প্রতিবাদ। খুব শিগগিরই এই প্রতিবাদব্যাপক সমর্থন লাভ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে এক গণ আন্দোলন জাগিয়েতোলে। তাদের যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও এই অসন্তোষ সামাল দিতে ব্যর্থ হয় রাজ্য ওকেন্দ্রীয় সরকার। দুর্নীতি ও দাম বাড়ার বিরুদ্ধে এ এক ব্যাপক ভিত্তিক আন্দোলনহলেও, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী এ আন্দোলনের জন্য জনসঙ্ঘকে দোষারোপ করায় অবস্হা যায়আরও খারাপ হয়ে। ১৯৭৩-এর মধ্যে, নরেন্দ্র মোদী সামাজিক সক্রিয়তাবাদে গভীর আগ্রহদেখান এবং চড়া দাম মুদ্রাস্ফীতি ও সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলার অন্যান্য ইস্যুরবিরুদ্ধে বেশ কিছু আন্দোলনে সামিল হন। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি)এক তরুণ প্রচারক ও সহযোগী রূপে, নরেন্দ্র মোদী অংশ নেন নবনির্মাণ আন্দোলনে এবং তাঁকেদেওয়া কাজ ঠিকঠাক সম্পন্ন করেন। সমাজের সব শ্রেণির সাধারণ মানুষ একযোগে নবনির্মাণআন্দোলনের পক্ষ নেওয়ায় তা ছিল সব দিক থেকেই এক

 

গণবিক্ষোভ। দুর্নীতিরবিরুদ্ধে এক সুপরিচিত প্রতিবাদকারী ও শ্রদ্ধেয় জননেতা জয়প্রকাশ নারায়নের সমর্থনলাভ করলে এই আন্দোলন হয়ে ওঠে আরও জোরদার। আমেদাবাদে জয়প্রকাশ নারায়নকে পেয়ে, সেইসহজাত প্রেরণাদায়ী নেতার ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার এক অনন্য সুযোগ লাভ করেন নরেন্দ্রমোদী। প্রবীণ নেতার সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা এক গভীর ছাপ ফেলে তরুণ নরেন্দ্ররমনে। নবনির্মাণ আন্দোলন যথেষ্ট সফল হয়েছিল এবং মাত্র দু ’ মাস পরে ইস্তফা দিতেবাধ্য হন চিমনভাই পটেল। নির্বাচন ডাকা হয় এবং কংগ্রেস সরকার ক্ষমতা হারায়।অদৃষ্টের পরিহাস, গুজরাট ভোটের ফল বেরোয় ১২ জুন ১৯৭৫, ঐ দিনটিতেই নির্বাচনীভ্রষ্টাচারের দায়ে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করে এলাহাবাদহাইকোর্ট এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেব তার ভবিষ্যৎ নিয়ে তুলে দেয় এক প্রশ্নচিহ্ন। একসপ্তাহ পর বাবুভাই যশভাই পটেলের নেতৃত্বে গুজরাট প্রতিষ্টিত হয় এক নতুন সরকার।গণপ্রতিবাদ নিয়ে নরেন্দ্রর প্রথম অভিজ্ঞতা নবনির্মাণ আন্দোলন এবং তা সামাজিক ইসুতেতার দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারে সাহায্য করেছিল। এই আন্দোলন নরেন্দ্রকে তার রাজনৈতিকজীবনে প্রথম পদের দিকে এগিয়ে দেয়, তিনি ১৯৭৫-এ হন গুজরাট লোকসংঘর্ষ সমিতির সাধারণসচিব। আন্দোলনের সময়, খুব কাছ থেকে তিনি ছাত্রদের সমস্যাগুলি বোঝার সুযোগপেয়েছিলেন, যা কিনা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তার খুবকাজে আসে। ২০০১ ইস্তক তিনি শিক্ষা সংস্কার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং গুজরাটের যুবাদেরজন্য এনে দেন বিশ্বমানের শিক্ষার সুযোগ। গুজরাটে নবনির্মাণ আন্দোলন-পরবর্তী আশাবাদস্হায়ী হয়নি বেশিদিন। ২৫ জুন ১৯৭৫-এর মাঝ রাতে নাগরিক অধিকার খারিজ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাছেঁটে দেশে জরুরি অবস্হা জারি করেন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। শুরু হয়নরেন্দ্র মোদীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়।