রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের(আরএসএস) স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উত্থান এবং ভারতীয়জনতা পার্টিতে (বিজেপি) তার যোগদান ঘটে আট ও নয়ের দশকের গোড়ায় স্বাধীন ভারতেরইতিহাসের এক কঠিন সময়ে। বিভিন্ন প্রান্তে বিবাদ আর সংঘর্ষে দেশ তখন টুকরো টুকরোহয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং কেন্দ্র অসহায় নিছক দর্শক। পাঞ্জাব ও অসমে জোর সংঘর্ষেরদরুন আমাদের মাতৃভূমির অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন। দেশে বিভেদকামী রাজনীতিররমরমা। গুজরাটে কারফিউ তখন এক সাধারণ ব্যাপার। ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই, সম্প্রদায়েরবিপক্ষে সম্প্রদায়, সৌজন্যে ভোট-ব্যাঙ্ক রাজনীতির চল।

গণতন্ত্র সর্দার প্যাটেলের স্বাধীন মতপ্রকাশের মূল্যবোধেঅঙ্গীকারবদ্ধ এক শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ ভারতের দর্শনের বিশ্বাস রেখে পরিস্হিতিরমোকাবিলায় এগিয়ে এলেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশের হতাশাজনক অবস্হা জাগিয়ে তুললোশ্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যেকার দেশপ্রেমিককে, ভাবাদর্শের এই সংগ্রামে যিনি আরএসএস ওবিজেপি-র জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। একেবারে তরুণ বয়স থেকে, তিনি নিজেকেশুধুমাত্র একনিষ্ঠ কর্মী নয়, দক্ষ এক সংগঠক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। অশুভস্হিতাবস্হাকে চ্যালেঞ্জ করে তার মোকাবিলায় এগিয়ে আসবেন, এটাই তো তার পক্ষেমানানসই।

Shri Narendra Modi in Ahmedabad during the Ekta Yatra 

আটের দশকের শেষ নাগাদ, দেশের উত্তর প্রান্তের রাজ্য ভূস্বর্গ নামেপরিচিত জম্মু-কাশ্মীর পরিণত হয়েছে রীতিমত এক রণক্ষেত্রে। কেন্দ্রের সুযোগসন্ধানীরাজনীতির সঙ্গে ১৯৮৭ রাজ্য বিধানসভা ভোটে গণতন্ত্রের উৎকট উল্লঙ্ঘনের মিশেলজম্মু-কাশ্মীরকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপের এক আখড়া বানিয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরজায়গা হিসেবে গণ্য উপত্যকাটি পথেঘাটে রক্তাক্ত সংঘর্ষের দরুন খুব দ্রুত এক রনাঙ্গনহয়ে উঠছিল। পরিস্হিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে কাশ্মীরে তেরঙ্গা পতাকা তোলাও যেননিষিদ্ধ। প্রতিকারের কোন ব্যবস্হা নেওয়ার পরিবর্তে কেন্দ্র সব দেখে গিয়েছিলঅসহায়ভাবে।

১৯৮৯-এ দেশদ্রোহী দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীমুফতি মহম্মদ সঈদের মেয়ে রুবাইয়াকে। কিন্তু কোন কড়া ব্যবস্হা না নিয়ে দিল্লি রুবাইয়ারমুক্তির বিনিময়ে ভারতবিরোধী জঙ্গিদের তড়িঘড়ি ছেড়ে দেওয়ার সোজা পথটি বেছে নেয়,এর ফলে মদত পায় দেশদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি।

ভারতের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করার এই পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেবিজেপি নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারেনি। কাশ্মীরে এক সফরের সময় শ্যামাপ্রসাদমুখোপাধ্যায় তার জীবন

উৎসর্গ করেন এবং কয়েক দশক পর তাই বিজেপি-র উপরদায়িত্ব পড়ল জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সরব হওয়ার। এই অভূতপূর্ব পরিস্হিতির মোকাবিলায়জাতীয় ঐক্যের বার্তা তুলে ধরতে ‘ একতা যাত্রা ’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেনদলের ত ৎকালীন সভাপতি ডঃ মুরলী মনোহর জোশী। এই যাত্রার সূচনা হবে কন্যাকুমারীতে,যেখানে স্বামী বিবেকানন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনের উদ্দেশ্য এবং শেষ হবে শ্রীনগরেরলালচকে তেরঙ্গা পতাকা তুলে।

তার সংগঠনিক দক্ষতার কথা মনে রেখে যাত্রার প্রস্তুতির দায়িত্ব দেওয়াহয় শ্রী নরেন্দ্র মোদীকে। মনপ্রাণ ঢেলে, সাংগঠনিক কুশলতা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমেদায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তিনি বহু ঝুঁকি সামলে খুব অল্প সময়ে ঢালাও বন্দেবস্ত করেন।কোন ভয়ডর না করে, যাত্রাপথের প্রতিটি স্হান ঘুরে দেখেন, কথা বলেন দলের কর্মীদেরসঙ্গে।

Shri Narendra Modi during Ekta Yatra 

তিনি দলের কর্মীদের উজ্জীবিত করেন, অনুপ্রেরণা যোগান, তাদের মধ্যেদেশপ্রেমের আবেগ জাগিয়ে তুলে যাত্রার সাফল্যের ভিত গড়ে তোলেন। এই কাজের মাধ্যমেতিনি নিজেকে শুধুমাত্র এক দুঁদে সংগঠক হিসেবে তুলে ধরেননি, যে কোন অবস্হায় ঝোড়োগতিতে কাজ সম্পন্ন করার তাঁর এলেমও দেখিয়ে দেন। যে গুণ ইদানিংকার জনজীবনে দেখামেলা ভার। শ্রী মোদীকে দেখা গেল প্রতিকূল পরিস্হিতিতেও এক চটপটে সিদ্ধান্তকারক হিসেবেএবং যিনি কিনা তার সিদ্ধান্তকে রূপায়িত করার এলেম ধরেন।

সুব্রামনিয়া ভারতী জন্মবার্ষিকী ও গুরু তেগ বাহাদুরের ‘ বলিদান দিবস ’ -এর সঙ্গে সমাপতন রেখে একতা যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯-র ১১ডিসেম্বর। বিভেদকামী ও হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির বিরোধিতা এবং কাশ্মীরে সন্ত্রাসেরঅবদান এই দুটি মূল ইসু তুলে ধরা হয় দেশজুড়ে।

যেখানই তিনি গেছেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরবাণীর প্রতিধ্বনি করে শ্রী মোদী বলেন ভারতের একতা সবকিছুরই উপরে এবং সমাজেরবিভিন্ন শ্রেণীর জন্য পৃথক পৃথক মানদন্ডে তিনি আস্হা রাখেন না। দেশদ্রোহীগোষ্ঠীগুলির প্রতি একটা জুতসই জবাব দেওয়া তখন জরুরি ছিল এবং সময় এলে, সামনে থেকে নেতৃত্বদিয়েছেন শ্রী মোদী। বলতে গেলে প্রায় সব জায়গাতেই মানুষ সো ৎসাহে স্বাগতজানিয়েছে একতা যাত্রাকে। ডঃ জোশী দেশের পুরুজ্জীবনের গুরুত্ব দেন, ভারতের মানুষেরকাছে যা কিনা তাৎক্ষনাৎ গ্রহনযোগ্য হয়ে ওঠে।

দিল্লিতে এক অন্ধ কংগ্রেস সরকারের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য একতাযাত্রার চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারত না। বলা বাহুল্য, এই যাত্রার সাফল্য শ্রীনরেন্দ্র মোদীর পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাত্রা যতই এগিয়েছে তার সাংগঠনিকমুনশিয়ানা ততই নিজেকে মেলে ধরেছে। মেকি ধর্মনিরপক্ষতা ও ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতিরমৃত্যুবাণ হানার জন্য ভারতের মানুষের কাছে আর্জি জানান শ্রী মোদী। ১৯৯২-এর ২৬জানুয়ারী শ্রীনগরে তেরঙ্গা পতাকা ওড়া দেখার সময় উচ্ছাসে নরেন্দ্র মোদী হয়ে ওঠেনআবেগপূর্ণ। ভারত মাতার শক্তিমত্তা আরও একবার চূর্ণ করে দেয় ভারতবিরোধী দলবলেরকান্ডজ্ঞানহীনতা অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্হিতির মধ্যে এই বিরল জাতীয় মিশন সক্ষম করে।অতুলনীয় সাহস, দূরদর্শিতার সঙ্গে দেশদ্রোহীদের মোক্ষম জবাব দেওয়াটা শ্রী মোদীরকর্মকুশলতার প্রতি এক শ্রদ্ধাঞ্জলি।