মঞ্চেউপবিষ্ট বিশিষ্টজন এবং
ভদ্রমহিলাও ভদ্রমহোদয়গণ,
নয়াদিল্লিরএই সম্মেলনে আপনাদের সকলকে আমি স্বাগত জানাই। বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে সেনডাইকার্যসূচি গৃহীত হওয়ার পর এটিই হল প্রথম গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন।
এশিয়া-প্রশান্তমহাসাগর অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সরকার, রাষ্ট্রসঙ্ঘ এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষেরপ্রতিনিধিবৃন্দ এক বিশেষ লক্ষ্যে সমবেত হয়েছেন এখানে। এজন্য আমি তাঁদের সাধুবাদজানাই।
বন্ধুগণ,
২০১৫ছিল আমাদের সকলের কাছে এক স্মরণীয় বছর। সেনডাই কার্যসূচি ছাড়াও মানবজাতির ভবিষ্যৎনির্ধারণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গৃহীত হয়েছে আরও দুটি বড় ধরনের কার্যসূচি :
- নিরন্তর উন্নয়নেরলক্ষ্যমাত্রা,
- এবং জলবায়ুপরিবর্তন সম্পর্কে প্যারিস চুক্তি।
পরস্পরেরসঙ্গে সংযুক্তি হল এই আন্তর্জাতিক কর্মসূচিগুলির এক বিশেষ উল্লেখযোগ্য দিক। এগুলিরপ্রত্যেকটির সাফল্য নির্ভর করছে অন্য দুটি কর্মসূচির সাফল্যের ওপর। জলবায়ুপরিবর্তন সম্পর্কিত চুক্তি রূপায়ণ তথা নিরন্তর উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণেরকেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিপর্যয়ের ঝুঁকি হ্রাস করার লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি । এই পরিস্থিতিতে আজকের এই সম্মেলন যথেষ্ট সময়োচিতএবং খুবই প্রাসঙ্গিক।
বন্ধুগণ,
গতদু’দশক ধরে সমগ্র বিশ্বে, বিশেষত আমাদের এই অঞ্চলে, ঘটে গেছে বহু পরিবর্তন যারঅধিকাংশই ছিল ইতিবাচক। আমাদের এই অঞ্চলের বহু রাষ্ট্রই তাদের অর্থনীতিতে রূপান্তরঘটিয়েছে এবং এইভাবেই তারা হয়ে উঠেছে বিশ্ব অর্থনীতির সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এক বিশেষ চালিকাশক্তি।কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে আসা হয়েছে দারিদ্রসীমার ঊর্ধ্বে। নানা দিক দিয়েইএশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল বর্তমানে রয়েছে এক নেতৃত্বদানের ভূমিকায়।
কিন্তুশুধুমাত্র এই অগ্রগতিতেই আমাদের সন্তুষ্ট হলে চলবে না, কারণ আমাদের সামনে রয়েছেবহু চ্যালেঞ্জ। গত ২০ বছরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে বিপর্যয়ের কারণে প্রাণহারিয়েছেন ৮ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ। বিপর্যয়ের কারণে মৃত্যুর ঘটনার শিকার হয়েছে যে প্রথমদশটি দেশ, তার মধ্যে সাতটিরই অবস্থান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে।
বিপর্যয়কবলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে প্রত্যক্ষ করেছি আমি। ২০০১ সালে গুজরাট ভূমিকম্পেরসাক্ষী থেকেছি আমি এবং পরে ঐ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভূকম্প পরবর্তীপুনরুদ্ধারের কাজে আমি অংশগ্রহণ করেছি রাজ্যবাসীর সঙ্গে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরদুর্দশার দৃশ্য ছিল খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু বিপর্যয়ের কবল থেকে বেরিয়ে আসারলক্ষ্যে তাঁদের সাহস, সঙ্কল্প ও চিন্তাভাবনা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমারঅভিজ্ঞতায় যত বেশি করে সাধারণ মানুষের নেতৃত্বে আমরা আস্থা স্থাপন করেছি, তত বেশিসুফল লাভ করেছি আমরা। শুধুমাত্র গৃহস্থ বাড়ির পুনর্নিমাণের কাজেই নয়, সমষ্টির জন্যনির্মাণের ক্ষেত্রেও আমি তা লক্ষ্য করেছি। দৃষ্টান্তস্বরূপ, একটি বিদ্যালয়পুনর্গঠনের দায়িত্ব যখন আমরা জনসাধারণের হাতে তুলে দিয়েছিলাম, তখন লক্ষ্য করেছি যেভূকম্প নিরোধক সেই বাড়ি তৈরি হয়েছে অনেক কম খরচে অথচ সঠিক সময়ে। যে অর্থের সাশ্রয়ঘটেছে তা ফেরত দেওয়া হয়েছে সরকারকে। নীতি প্রণয়ন এবং তা রূপায়ণের মধ্য দিয়ে এইধরনের উদ্যোগ ও নেতৃত্বকে সমর্থন যুগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে ।
বন্ধুগণ,
আমরা,অর্থাৎ এশিয়াবাসীরা, দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখেছি। মাত্র ২৫বছর আগেও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা গড়ে উঠেছিল এশিয়ার কয়েকটি মাত্র রাষ্ট্রে।কিন্তু আজ বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেএশিয়ার ৩০টিরও বেশি দেশ। ২০১৪ সালে ভারত মহাসাগরে সুনামির ঘটনার পর সবচেয়ে বেশিক্ষতিগ্রস্ত পাঁচটি দেশ বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় তৈরি করেছে নতুন কিছু আইন। আরমাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই প্রথম ‘আন্তর্জাতিক সুনামি সচেতনতা দিবস’ পালন করতে চলেছিআমরা। সুনামির মতো ঘটনার আগাম সতর্কতা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যে যথেষ্ট মাত্রায়এগিয়ে গিয়েছি তারই এক বিশেষ উদযাপনের মুহূর্ত হল ঐ দিনটি। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে ভারতমহাসাগরে সুনামি যখন আছরে পড়েছিল তখন আমরা ছিলাম অপ্রস্তুত, কোনরকম আগাম সতর্কতারব্যবস্থাও তখন ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সুনামির মতো ঘটনারজন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু রয়েছে পূর্ণ মাত্রায়। মহাসাগর সম্পর্কিত তথ্যপরিষেবাদানের লক্ষ্যে ভারতের জাতীয় কেন্দ্রটি অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াকে সঙ্গেনিয়ে সুনামির মতো বিপর্যয় সম্পর্কে আঞ্চলিক বুলেটিন প্রচারের কাজে এখন যুক্তরয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়সম্পর্কে আগাম সতর্কতাদানের ক্ষেত্রেও এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। আমরা যদি ভারতে১৯৯৯ এবং ২০১৩-র ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তুলনা করি, তাহলেই আমাদের অগ্রগতিকতখানি তা আমরা উপলব্ধি করতে পারব। অন্যান্য দেশেও এই ধরনের অগ্রগতি সম্ভব হয়েউঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের পর বাংলাদেশ সরকার ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কেপ্রস্তুত থাকতে এক বড় ধরনের সমষ্টিভিত্তিক কর্মসূচি চালু করে। এর সুবাদে ঘূর্ণিঝড়েপ্রাণহানির ঘটনা অনেকটাই কমে এসেছে। তাই, এই ধরনের ব্যবস্থাকে এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠব্যবস্থা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আমিএতক্ষণ যা বললাম তা একটি সূচনামাত্র। আমাদের সামনে বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে আরওঅনেক। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে নগরায়নের প্রসার ঘটছে। হয়তো আর এক দশকেরমধ্যেই গ্রামের তুলনায় বেশিরভাগ লোকের বসবাস শুরু হবে শহরগুলিতেই। নগরায়নবিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলার ক্ষেত্রে আরও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ,ছোট ছোট এলাকার মধ্যে একদিকে যেমন মানুষের বসবাসের ঘনত্ব বাড়বে, অন্যদিকে তারইপাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে সম্পত্তি ও অর্থনৈতিক কর্মব্যস্ততা। এই এলাকাগুলির অনেকগুলিইআবার দুর্যোগ প্রবণ এলাকাতে অবস্থিত। তাই, পরিকল্পনা এবং তা রূপায়ণের মাধ্যমে এইঅগ্রগতির বিষয়টিকে যদি আমরা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারি, তাহলে বিপর্যয়েরকারণে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি এবং জীবনহানির আশঙ্কা আগের থেকেও আরও অনেক বেড়ে যাওয়ারআশঙ্কা রয়েছে ।
এইপরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে বিপর্যয়ের ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকেনতুন উদ্যমে নিয়োজিত করতে দশ দফা কর্মসূচির একটি রূপরেখা আমি এখানেউপস্থাপিত করছি :
প্রথমত, বিপর্যয়ের ঝুঁকিমোকাবিলার নীতি গৃহীত হওয়া উচিত উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। কারণ, বিমানবন্দর,সড়ক, পরিখা ও জলাশয়, হাসপাতাল, শিক্ষায়তন, সেতু – সমস্ত ধরনের উন্নয়ন প্রকল্পনির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মান যাতে বজায় থাকে তা সুনিশ্চিত করে তোলা যাবে এইব্যবস্থার মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, যাঁদের জন্য এগুলি নির্মিত হচ্ছে সেই বিপুলসংখ্যক জনসাধারণের সেবা ও পরিষেবার কাজ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে তাও নিশ্চিত করা সম্ভবহবে এর মধ্য দিয়ে। আর মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই বিশ্বের নতুন নতুন পরিকাঠামোরঅধিকাংশই গড়ে উঠবে আমাদের এই অঞ্চলে। বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যসুনির্দিষ্ট মানে যাতে এই পরিকাঠামোগুলি গড়ে ওঠে তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। এটিহল এক ‘স্মার্ট স্ট্র্যাটেজি’ যার সুফল মিলবে পরিশেষে।
সরকারিব্যয়ের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঝুঁকির বিষয়টিকে মনে রাখতে হবে। ভারতে ‘সকলের জন্যবাসস্থান’ এবং ‘স্মার্ট নগরী’র মতো কর্মসূচিগুলিতে সুযোগ রয়েছে এই বিষয়টি নিশ্চিতকরার। এই অঞ্চলে বিপর্যয় নিরোধক পরিকাঠামো গড়ে তুলতে অন্যান্য অংশীদার দেশ এবংসংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সঙ্গে নিয়েই ভারত গড়ে তুলবে এক সহযোগিতার বাতাবরণ। বিপর্যয়েরঝুঁকি ও তার মাত্রা নির্ণয়, বিপর্যয় প্রতিরোধী প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো লগ্নিরক্ষেত্রে ঝুঁকি হ্রাসের বিষয়গুলিকে যুক্ত করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, দরিদ্র মানুষেরবাসস্থান থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং বহুজাতিক সংস্থা থেকে জাতি তথারাষ্ট্র – সকল ক্ষেত্রেই এবং সকলের জন্যই ঝুঁকির মোকাবিলায় ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাকরা প্রয়োজন। বর্তমানে এই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশেই বিমার সুযোগ রয়েছে শুধুমাত্রমধ্যবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য। কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হবে এইকাজকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে। চিন্তা করতে হবে নতুন নতুন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে।রাষ্ট্রের ভূমিকার গুরুত্ব তাই শুধু নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যাঁদেরপ্রয়োজন সবথেকে বেশি তাঁদের জন্যও ক্ষতিপূরণদানের বিষয়গুলিকে উৎসাহিত করতে হবে।ভারতে দরিদ্রতম মানুষটির জন্যও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ঝুঁকি বিমা চালু করার মতোবলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি আমরা। ‘জন ধন যোজনা’ কোটি কোটি মানুষকে যুক্ত করেছেব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সঙ্গে। সুরক্ষা বিমা যোজনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে আরও লক্ষ লক্ষমানুষকে যাঁদের জীবনে এই বিমার প্রয়োজন সবথেকে বেশি। কোটি কোটি কৃষকের কাছে ঝুঁকিরকারণে বিমার সুযোগ পৌঁছে দিতে আমরা চালু করেছি ‘ফসল বিমা যোজনা’। ব্যক্তি তথাগৃহস্থ মানুষের কাছে দুর্যোগ প্রতিরোধের সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এ সমস্ত কিছুইহল আমাদের প্রাথমিক সূচনা মাত্র।
তৃতীয়ত, বিপর্যয়ের ঝুঁকিমোকাবিলার কাজে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তি ও নেতৃত্বদানের বিষয়টিকেও উৎসাহিত করতে হবে।বিপর্যয়ের সহজ শিকার হলেন মহিলারাই। অথচ তাঁদের রয়েছে অসামান্য মনোবল ওঅন্তর্দৃষ্টি। বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের বিশেষ প্রয়োজন মেটানোর কাজেঅংশগ্রহণের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিতে হবে আরও বেশি সংখ্যক নারীস্বেচ্ছাসেবীকে। এই কাজে আমাদের প্রয়োজন মহিলা প্রযুক্তিবিদ, মহিলা কারিগর এবংমহিলা স্থপতি। কারণ তাঁরা বেশ ভালোভাবেই সাহায্য করতে পারেন পুনর্নিমাণের কাজে।জীবিকা নির্বাহের কাজে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করতে পারে মহিলা স্বনির্ভরগোষ্ঠীগুলি।
চতুর্থত, ঝুঁকির মাত্রানির্ণয়ের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে বিশ্বের সমস্ত দেশেই। ভূমিকম্পের মতোবিপর্যয়ের ঝুঁকি নির্ণয়ের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট মান ও মাপকাঠির ব্যাপক প্রয়োগ করেছিআমরা এবং এর ওপরই ভিত্তি করে ভারতে আমরা চিহ্নিত করেছি ভূকম্প প্রবণ এলাকা ওঅঞ্চলগুলির। এর মধ্যে পাঁচটি অঞ্চল হল অতিমাত্রায় ভূকম্প প্রবণ এবং দুটি হলঅপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকির এলাকা। রাসায়নিক বিপর্যয়, দাবানল, ঘূর্ণাবর্ত, বন্যা – এইধরনের বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে আমাদের এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে তা স্বীকৃত হয়বিশ্বের সর্বত্র। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিপর্যয়ের প্রকৃতি এবংতার ভয়ঙ্করতা সম্পর্কে একটি সাধারণ ধারণা গড়ে তোলার কাজ আমরা নিশ্চিত করতে পারব।
পঞ্চমত, বিপর্যয়ের ঝুঁকিমোকাবিলার প্রচেষ্টায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে আমাদের।ব্যক্তি তথা সংস্থাকে এক নির্দিষ্ট ছত্রছায়ায় নিয়ে আসতে এবং প্রযুক্তি, জ্ঞান ওপরামর্শ এবং সহায়সম্পদের বিনিময়ের লক্ষ্যে প্রযুক্তিচালিত এক বিশেষ মঞ্চ গড়ে তুলতেহবে আমাদের। এই ব্যবস্থায় আমাদের সমবেত প্রচেষ্টার ফল হবে সুদূরপ্রসারী।
ষষ্ঠত, বিপর্যয় সংক্রান্তবিষয়ে সমীক্ষা ও গবেষণার লক্ষ্যে গড়ে তুলতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটিনেটওয়ার্ক। কারণ, সামাজিক দায়িত্ব পালনের প্রয়োজন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও।সেনডাই কর্মসূচির প্রথম পাঁচ বছরে আমাদের উচিত বিপর্যয়ের ঝুঁকি ও সমস্যা মোকাবিলারসঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির এক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। এই নেটওয়ার্কের অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়বিপর্যয় সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলিতে বহুমুখী সমীক্ষা ও গবেষণা প্রচেষ্টাচালানোর সুযোগ পাবে। উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি উপকূল অঞ্চলেরবিপর্যয়ের ঝুঁকির মোকাবিলার ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবে।অন্যদিকে, পার্বত্য শহরগুলিতে অবস্থিত এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি পাহাড়ি অঞ্চলের বিপর্যয়েরঝুঁকি মোকাবিলার কাজে সমীক্ষা ও গবেষণার সুযোগ নিতে পারবে।
সপ্তমত, সোশ্যল মিডিয়া এবংমোবাইল প্রযুক্তির সুযোগ আমাদের পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে। বিপর্যয় মোকাবিলারক্ষেত্রে এক বিশেষ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে সোশ্যল মিডিয়াগুলি। মোকাবিলার কাজে যুক্তবিভিন্ন সংস্থা এর ফলে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছে একে অপরের সঙ্গে এবং নাগরিকরাওখুব সহজেই একে অপরের সাহায্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ লাভকরছেন। সোশ্যল মিডিয়ার সম্ভাবনাকে আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। একইসঙ্গেবিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন্স-এর উদ্ভাবন ও প্রয়োগও একান্তজরুরি।
অষ্টমত, স্থানীয় তথাআঞ্চলিক পর্যায়ে উদ্যোগ ও দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। দ্রুত হারে বেড়ে ওঠাঅর্থনীতির দেশগুলিতে বিপর্যয় মোকাবিলার কাজ এত বিশাল যে দেশের সাধারণপ্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করা যায় পরিস্থিতিকে আরও সহজ করে তোলার কাজে । কিন্তু সুনির্দিষ্ট কাজ শুরু করতে হবে স্থানীয়পর্যায়েই। গত দু’দশক ধরে সমষ্টিভিত্তিক বিভিন্ন প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ থেকেছেশুধুমাত্র বিপর্যয় মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং স্বল্পমেয়াদি আপৎকালীন পরিস্থিতিরপরিকল্পনা রচনার কাজে। কিন্তু সমষ্টিভিত্তিক এই প্রচেষ্টার সুযোগ আরও সম্প্রসারিতকরা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে, স্থানীয় পর্যায়ে ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাউদ্ভাবন এবং তা রূপায়ণের বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে। এই ধরনের প্রচেষ্টা ঝুঁকিরমাত্রা কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্থানীয় ও আঞ্চলিক বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে এবংস্থায়ী জীবিকা নির্বাহেরও ব্যবস্থা করতে পারে। এইভাবে স্থানীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়েযদি বিপর্যয়ের ঝুঁকি এড়ানোর ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, তাহলে এই ধরনের কাজে সচরাচরব্যবহৃত পদ্ধতি এবং এই দেশের প্রেক্ষাপটে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে আমরা কাজেলাগাতে পারব।
বিপর্যয়মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির উচিত জনসাধারণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ওপরামর্শক্রমে বিপর্যয় মোকাবিলার জরুরি ব্যবস্থাগুলি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা । দৃষ্টান্তস্বরূপ, কোন দমকল যদি প্রতি সপ্তাহেএকটি করে স্কুলও বেছে নেয়, তাহলে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে মাত্র এক বছরের মধ্যেইবিপর্যয় মোকাবিলার খুঁটিনাটি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
নবমত, বিপর্যয় থেকে আমরাযে ধরনের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করি তা কাজে লাগানোর সুযোগ কোনভাবেই নষ্ট হতেদেওয়া উচিত নয়। কারণ, একই ধরনের বিপর্যয় কিন্তু আবার ঘটতে পারে। তাই, চাক্ষুষ কিছুশিক্ষা লাভেরও প্রয়োজন রয়েছে। বিপর্যয়ের ঘটনা, তার মাত্রা ও পরিধি, ত্রাণ ওপুনর্বাসন এবং পরবর্তীকালে পুনর্নিমাণ ও পুনরুদ্ধারের কাজ সম্পর্কে এক আন্তর্জাতিকতথ্যচিত্র প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
বিপর্যয়পরবর্তী পুনরুদ্ধারের কাজ ব্যবহারিক পরিকাঠামোর দিক থেকে শুধুমাত্র ‘যা ছিল তাকেফিরিয়ে আনা’র সুযোগ মাত্র নয়, বরং ঝুঁকির মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তা আরওএক উন্নত প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ ও সম্ভাবনা এনে দেয় আমাদেরসামনে। এই কারণে আমাদের কাজে লাগাতে হবে এমন কিছু ব্যবস্থাকে যা দ্রুত ঝুঁকিরবিষয়গুলি মোকাবিলা করতে পারে। বিপর্যয় পরবর্তীকালে ঘর-বাড়ি পুনর্নিমাণের কাজেসহায়তাদানের লক্ষ্যে ভারত তার অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে তথা সংশ্লিষ্ট বহুপক্ষকেনিয়ে গড়ে ওঠা উন্নয়ন সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহায়তা পদ্ধতি গড়ে তুলবে।
এবং পরিশেষে, বিপর্যয় মোকাবিলায়আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও জোরদার করে তুলতে হবে। কোন বিপর্যয়ের পরেবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বিভিন্ন রাষ্ট্র। যদি আমরাএকটি সাধারণ ছত্রছায়ায় মিলিত হয়ে যুক্তভাবে কাজ করতে পারি, তাহলে আমাদের এই সমবেতশক্তি ও সংহতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে একটি সাধারণ লোগো ওব্র্যান্ড গড়ে তুলতে পারে রাষ্ট্রসঙ্ঘ যার আওতায় আগ্রহী সকলেই ত্রাণ, পুনর্বাসন ওপুনর্নিমাণের কাজে একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে যুক্ত হতে পারে।
বন্ধুগণ,
বহিঃশত্রুরআক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করে সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু বিপর্যয়ের মোকাবিলায় মানুষকেরক্ষা করার কাজে সঠিক শিক্ষার মাধ্যমে আমরা গড়ে তুলতে পারি আমাদের সমাজব্যবস্থাকে।
সেনডাইকার্যসূচির অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যটিকে আন্তরিকভাবেই গ্রহণ করতে হবেআমাদের। কারণ তার মধ্যে রয়েছে বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণেরএক বিশেষ দিশা ।
সেনডাইকার্যসূচি রূপায়ণে একে অপরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কাজে ভারতঅঙ্গীকারবদ্ধ। এ বছর জুন মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ভারতের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলাপরিকল্পনা। অগ্রাধিকারের বিষয়গুলিতে সেনডাই কার্যসূচির সঙ্গেই মিল ও সামঞ্জস্যরয়েছে আমাদের এই পরিকল্পনাটির।
বিপর্যয়প্রতিরোধে এই অঞ্চলের সবক’টি দেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত। আমাদেরপ্রচেষ্টাকে আরও উৎসাহিত করে তুলবে আঞ্চলিক তথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহযোগিতা।
গতবছর নভেম্বরে ভারত প্রথম দক্ষিণ এশীয় বার্ষিক বিপর্যয় মোকাবিলা সম্পর্কিতকার্যক্রমের আয়োজন করেছিল। আঞ্চলিক সহযোগিতার এই শক্তিই ভারতকে উৎসাহিত করছে খুবশীঘ্রই দক্ষিণ এশীয় উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কাজে। এই উপগ্রহ এবং মহাকাশ-ভিত্তিকঅন্যান্য প্রযুক্তি বিপর্যয় মোকাবিলার সবক’টি ক্ষেত্রেই সাহায্য ও সহযোগিতারপ্রসার ঘটাতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে ঝুঁকির মাত্রা ও পরিধি নির্ণয়,ঝুঁকি হ্রাস, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, মোকাবিলার কাজ শুরু করা এবং পুনরুদ্ধার ওপুনর্নিমাণ। বিপর্যয় মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ভারত মহাকাশের ক্ষেত্রে তার ক্ষমতা ওদক্ষতা যে কোন দেশের সঙ্গেই ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।
সেনডাইকার্যসূচি রূপায়ণের সাথে সাথে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন নতুনক্ষেত্রগুলিকেও আমরা স্বাগত জানাব।
আমিনিশ্চিত যে এই সম্মেলন আমাদের প্রচেষ্টাকে আরও উৎসাহিত করবে এবং এর ফলাফলসমবেতভাবে কাজে নেমে পড়ার এক সুনির্দিষ্ট দিশার খোঁজ দেবে।
ধন্যবাদ।
2015 was a momentous year! Apart from Sendai Framework, international community adopted 2 major frameworks to shape future of humanity: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
They are the Sustainable Development Goals and the Paris Agreement on Climate Change: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Over the last two decades, the world and especially our region has undergone many changes– most of them positive: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
The Asia-Pacific region has been a global leader in more ways than one: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
We in Asia have learnt from disasters: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
A quarter century ago, only a handful of Asian nations had national disaster management institutions: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Today, over thirty Asian countries have dedicated institutions leading disaster risk management efforts: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
We now have a fully functional Indian Ocean Tsunami Warning System: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Same goes for improvements in cyclone early warning. If we compare impact of cyclone events in 1999 & 2013, we can see progress made: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Let me outline a ten-point agenda for renewing our efforts towards disaster risk reduction: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
First, all development sectors must imbibe the principles of disaster risk management: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Second, work towards risk coverage for all–starting from poor households to SMEs to multi-national corporations to nation states: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Third, encourage greater involvement and leadership of women in disaster risk management: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Fourth, invest in risk mapping globally. For mapping risks related to hazards like earthquakes we have accepted standards & parameters: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Fifth, leverage technology to enhance the efficiency of our disaster risk management efforts: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Sixth, develop a network of universities to work on disaster issues: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Seventh, utilize the opportunities provided by social media and mobile technologies: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Eighth, build on local capacity and initiative: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
Ninth, opportunity to learn from a disaster must not be wasted. After every disaster there are papers on lessons that are rarely applied: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
And tenth, bring about greater cohesion in international response to disasters: PM @narendramodi
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016
We have to wholeheartedly embrace the spirit of Sendai which calls for an all-of-society approach to disaster risk management: PM
— PMO India (@PMOIndia) November 3, 2016